যাযাদি ডেস্ক
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি বাতিলের কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সাবেক এই স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রীকে “আইন” বিষয়ে ওই ডিগ্রি দেওয়া হয়েছিল।
তবে হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ সামনে আসার পর তাকে দেওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সোমবার (২১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে অস্টেলীয় সংবাদমাধ্যম ক্যানবেরা টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অস্ট্রেলিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক সাবেক বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি পুনর্বিবেচনা করছে। তার (হাসিনার) বিরুদ্ধে গণহত্যা ও গুম-খুনের অভিযোগ উঠার পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্মাননা প্রদান কমিটি শেখ হাসিনাকে ১৯৯৯ সালে দেওয়া সম্মানসূচক আইন ডিগ্রি বাতিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। যদিও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এখনো। তবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের ডিগ্রি প্রত্যাহারের পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করতে চায়।
ক্যানবেরা টাইমস, হাসিনার ডক্টরেট ডিগ্রি বাতিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখার এই খবর এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা।
তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও হত্যাসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তবে সেসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে আসছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে চালানো অভিযানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনীকে “দেখামাত্র গুলি” করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। মূলত কারফিউ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
এই মানবাধিকার সংস্থাটি সেসময় শেখ হাসিনার অধীনে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধ করতে এবং নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছিল।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছিলেন, “শেখ হাসিনাকে চাপ দিতে হবে যেন তিনি তার বাহিনী দিয়ে ছাত্র এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্মমতা বন্ধ করেন।”
এদিকে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ) জানিয়েছে, ডিগ্রি বাতিলের মতো ঘটনা তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ঘটেনি এবং এমন কোনও পদ্ধতিগত নজিরও এখন পর্যন্ত বিদ্যমান নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে এই ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে কাজ করছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পুলিশ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন করেছে। এই রেড নোটিশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে কাউকে খুঁজে বের করে প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানানো হয়, যাতে পরবর্তীতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর পর শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের কোনও স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন।