বিশেষ প্রতিনিধি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ডক্টর কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম (অব.) বলেছেন, আপনারা প্রায় ৯ মাস ক্ষমতায় আছেন। মনে হচ্ছে, ক্ষমতা ভোগ করছেন। জনগণের সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নেই। ৫ই আগষ্টের পর স্বৈরাচারের গুন্ডাদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগণ যে মামলাগুলি করেছে বা অভিযোগ দাখিল করেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও পর্যন্ত উক্ত মামলাগুলির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃশ্যতঃ কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে নাই। আপনারা কি দেশের জন্য কাজ করছেন? না আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য অপেক্ষা করছেন?
এছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমাদেরকে ভারতের দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত হবে না বা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়াও সঠিক হবে না। আমি এখানে সাবধান ও হুশিয়ার করে বলতে চাই যে, দেশ রক্তপাতের দিকে এগোচ্ছে। হয়ত আপনাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না। সুতরাং সময় থাকতেই সঠিক পদক্ষেপ নেন। জনগণকে শান্তিতে, স্বস্তিতে বসবাস করতে দিন। চাকরি হয়তঃ দিতে পারলেন না, কিন্তু শাস্তির প্রয়োজন। শুধু মিষ্টি কথায় ভাষণ দিয়ে, দেশ চালানো যাবেনা বা জনগণের সমস্যার সমাধান হবে না।
তিনি আজ শনিবার রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে এক যোগ অনুষ্ঠানেতিনি এ কথা বলেন। এদিন লে. জেনারেল (অব.) ড. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর নেতৃত্বে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা-আমলাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পাঁচ শতাধিক মানুষ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপিতে যোগ দেন।
এলডিপি মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী ও বারবার নির্বাচিত এমপি ড. রেদোয়ান আহমেদের সভাপতিত্বে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম (অব.)।
তিনি বলেন, বর্তমানে সমাজের কি অবস্থা তা আপনাদের জানা উচিত। অনেকে অবৈধ টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছে। বিভিন্ন তদবিরের জন্য সারাদিন সচিবালয়ে সময় কাটাচ্ছে। রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে। অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে। নিজেদের জন্য আলিশান অফিস ভাড়া নিচ্ছে। এই অবস্থায় জনগণ চুপ থাকলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
অনেকে ফেরেশতার মত কথা বলে, শয়তানের মত ধোকা দেয়। তাদের কাজ ও কর্মের মধ্যে মিল নাই। একেক সময় একেক ধরণের বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। জনগণকে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। সঠিক দলে যোগদান করতে হবে। সঠিক পার্টি ও ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে। অন্যতায় এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে, জাতির কপালের দুঃখ আছে। এলডিপি হচ্ছে, এই জাতির মুক্তির সনদ, ন্যায় ও সমতা নিশ্চিত করার একটি পাটি। সঠিক সিদ্ধান্ত নেন, দেশকে রক্ষা করেন। এ ব্যাপারে যুব সমাজকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
দেশপ্রেমিক ও জনবান্ধব ব্যবসায়ী; সরকারের উচিত দেশপ্রেমিক এবং জনবান্ধব ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলি শুনা, সমাধান দেওয়া এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে ন্যায়সঙ্গত সহযোগিতা করা। অহেতুক হয়রানী করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এখানে আমি উল্লেখ করতে চাই, স্বৈরাচারী হাসিনা প্রেমিক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, অনেক নিরাপরাধ ব্যবসায়ীকে হয়রানী করা হচ্ছে। উপদেষ্টাদের উচিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে একা একা বসে, তাদের সমস্যাগুলি শুনা এবং সমাধান দেওয়া। ৯টার মিটিং ১১টায় করে, তাদেরকে হয়রানী করা নয়। এছাড়াও সব ব্যবসায়ীদেরকে একসাথে ডাকলে, সকলের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণ সকল ব্যবসায়ীর সমস্যা একপ্রকার নয়। বিভিন্ন নিত্য পণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। অতি দ্রুত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে একা একা বসে এর সমাধান বের করেন। কাগজে কলমে ও খাতায় অর্থনীতি খুবই ভাল, কিন্তু বাস্তবে ফাঁকা। কোন ধরণের অগ্রগতি হয় নাই, যদি হয়ে থাকে জনগণকে হিসাব করে দেখান, বিদেশ থেকে কত টাকা বিনিয়োগ এসেছে। আমার জানামতে বিগত ৮ মাসে মাত্র ০.১০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে।
স্বৈরাচারী ও খুনি হাসিনার দোসরেরা ঝটিকা মিছিল করে, দেশকে অস্থিতিশীল করছে। বিভিন্ন জায়গায় খুন খারবি ও ডাকাতি করছে। সরকার নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু জনগণ মনে করে, এই ধরণের কর্মকাণ্ডে সরকারের ইন্দন রয়েছে, কারণ তারা জনগণের কাছে, তাদের ক্ষমতায় থাকার গুরুত্ব অপরিহার্য বলে প্রমাণ করতে চায়। বস্তুতঃ বর্তমানে ফ্রিস্টাইলে দেশ চলছে। ফলে দাবী-দাওয়ার শেষ নাই। বিনা কারণে যখন তখন মিছিল হচ্ছে, রাস্তা অবরোধ এবং সর্বত্র বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনগণের ভোগান্তি চরমে। এগুলি বন্ধ করার কোন লক্ষণ সরকারের পক্ষ থেকে নাই। রহস্য কোথায়? অন্যদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা, রাজনীতিবিদ ও আমলারা নিরাপদে আছে বা বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। আপনারা যারা সরকার পরিচালনার সাথে জড়িত আছেন, আপনাদের উপর গরীব অসহায় মানুষের অভিশাপ লাগবে। নতুনভাবে গজব নেমে আসবে। সময় এখনো হাতে আছে, সুতরাং সাধু সাবধান।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদায়ন ও প্রমোশন যোগ্যতা, সততা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
জেলা পর্যায়ে এল.আর, ফান্ডের নামে জনগণ থেকে চাঁদা আদায় করছে। নিম্ন পর্যায় থেকে অফিসারদেরকে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়। মন্ত্রীরা বা সরকারী কর্মকর্তারা সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে খাওয়ার পর বিল পরিশোধ করে না, এই বিলের টাকা এল.আর, ফান্ড থেকে পরিশোধ করা হয়। আপনাদের কি কোন বিবেক নাই? হারাম রোজগার বা হারাম খেয়ে এবাদত করলে তা কবুল হয় না। এই ব্যাপারে সরকারকে চিন্তা ভাবনা করে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এল.আর. ফান্ড বন্ধ করতে হবে।
যুব ও শিক্ষিত সমাজকে জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করতে হবে। আপনারা হলেন, এই জাতির ভবিষ্যৎ। নীতি নৈতিকতা, সততা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশকে সঠিক পথে রাখার জন্য বা সঠিক পথে পরিচালনার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে অশোভন ব্যবহার করা কখনও কাম্য নয়।
অভিজ্ঞতার আলোকে আমার পরামর্শ হল, সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারীদের ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের জন্য ইউএনডিপি এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক এনে, দেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে বা প্রয়োজনে ভারত ব্যাতীত অন্য কোন দেশে পাঠানো যেতে পারে।
স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে, যে সমস্ত সরকারি/আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হয়েছে, স্বনামে বা বেনামে রেজিষ্ট্রি করেছে, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
কর্নেল অলি বলেন, এলডিপিতে নতুন যোগদানকারী ডক্টর লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, বীর বিক্রম, SBP, OSP, BSP, ndc, psc সম্বন্ধে আপনাদেরকে অবহিত করতে চাই। তিনি একজন দক্ষ, মেধাবী এবং স্বনামধন্য সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষিত ও সিনিয়র কর্মকর্তা। সমগ্র দেশের মানুষের কাছে তিনি একনামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে অসীম সাহসিকতার সাথে দুষ্কৃতিকারীদের সম্মুখ আক্রমনে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর এই সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার জন্য “বীর বিক্রম” খেতাবে ভূষিত হন। চাকুরীরত অবস্থায় তিনি অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অন্যতম যেমন- বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল এর ভাইস চ্যান্সেলর, ndc এর কমান্ডেন্ট ও নবম ডিভিশনের জিওসি ইত্যাদি।