Jaijaidin

প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ফ্যাসীবাদের দোসররা অবস্থান করছে: রিজভী

Shah Alam Soulav
8 Min Read

বিশেষ প্রতিনিধি

সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোয়াশা তৈরী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ফ্যাসীবাদের দোসররা অবস্থান করছে সরকারের তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আমরা জেনেছি বিএনপির গন্ধ পেলেই প্রশাসন থেকে সাথে সাথে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার মানে কোনো একটা বিশেষ এজেন্ডা, নকশার মধ্য দিয়ে এই সরকার চলছে। এটাই আজকে মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোয়াশার তৈরী হচ্ছে।

বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর ১৩তম গুম দিবসে তার সন্ধান দাবিতে আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচ তলায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ‘ইলিয়াস আলী গুম প্রতিরোধ কমিটি’।

রাজনৈতিক সহকর্মী ইলিয়াস আলী প্রসঙ্গে সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নির্বাচিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম। আমরা ইলিয়াস আলীর অন্তরের পার্টটা দেখেছিলাম। শিশুর মতো তার অন্তর। জোরালো কথা বলতো, প্রতিবাদ করতো। না কে না-ই বলতো। না-এর পেছনে যে অন্য কিছু থাকে সেটা সে বুঝতো না।

আন্দোলনে ইলিয়াস আলীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, দেশপ্রেম ও দলের প্রতি যে আনুগত্য, অবিচল আস্থা সেটা আমাদের অনেকের মধ্যে দেখি না। দলের কর্মসূচি, যেমন সিলেটে হরতাল-সেটা কিভাবে হচ্ছো তা ম্যাডামকে জানানোর জন্য উদ্রীব থাকতো, যে কাজটি করলে ম্যাডাম খুশি হবেন সে কাজের জন্য তিনি ব্যাকুল থাকতেন।

রিজভী বলেন, তখন টিপাইমুখ বাঁধ ভারতীয় সরকার দেবে, বাঁধটা হবে সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা দিয়ে। এটা নিয়ে সারাদেশে হৈচৈ হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করছেন, বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে। প্রথমে একটা লং মার্চ হলো। সিলেটে আরও কিছু করতে হবে-এটা নিয়ে তার ভাবনা। অনেকেই বলে, আমারও বিশ্বাস এই যে তার দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদী ভূমিকা-এ কারণেই আজ আমাদের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। এটা মিথ্যা নয়, অনেক খানিই সত্য। এটা যারা সহ্য করতে পারেনি, যাদের প্রতিভূরা বাংলাদেশে তৎকালীন ক্ষমতায় ছিলেন তাদের যৌথ প্রযোজনায় ইলিয়াস আলীকে আমরা হারিয়েছি।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সে সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিদিনই তো কথা হতো, তখন তারা বলতো, দেখছি, দেখবো। কিন্ত আমরা তো জানি তারাই করেছে, সরাসরি সরকার করেছে। আরও কিছু কথা আছে যা বলতে চাই না, না বলাটাই ভালো। আমার কেন জানি মনে হয়েছে যে যাতে না থাকতে পারে অনেকেরেই কোনো প্রচেষ্টা ছিলো কিনা। সরকার ছিলো, গোয়েন্দা সংস্থা ছিলো, অনেকেই…। ম্যাডাম বারবার খোঁজ নিচ্ছেন…যা হোক এরপর আর বলতে চাই না। ইলিয়াসের জন্য বিএনপি সর্বাত্মক আন্দোলন, হরতাল করেছে, সকল প্রচেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, আজকে ইলিয়াস আলী নেই, চৌধুরী আলম, সুমনরা নেই। ড. ইউনূস সাহেব ক্ষমতায়, অনেক বিষয়ে অনেক তা বলছেন। কিন্তু যে ঘটনাবলী, গুম হয়ে বিএনপির যারা ১৫-১৬ বছর ধরে, বাড়িতে বাড়িতে, ঘরে ঘরে কান্নার রোল এখনো থামেনি। এদের আহাজারি এখনো আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়। ক্ষমতা চিরদিনের জন্য অটুট রাখতে শেখ হাসিনা রক্তাক্ত কর্মসূচি করেছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভুত হত্যা, ক্রসফায়ার, গণতন্ত্র হরণ, মানুষের কথা বলা যায় না প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে-এরই মধ্যে সমমনা দলগুলো বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন-সংগ্রাম করে শেখ হাসিনার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, প্রতিহত করে ১৫ বছর ধরে এতো যে আত্মত্যাগ তারই ফলশ্রুতিতে গত বছরের জুলাই-আগষ্টে ছাত্ররা-আমরা সাফল্যমণ্ডিত হই।

রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার একেবারেই কাজ করছে না এটা আমি বলব না। হয়তো কিছু করছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষ মামলা। ড. ইউনূস আজকে ৬০ মাস ক্ষমতায় আছেন মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করাবেন। এতোগুলো ঘটনা এবং ৬০ লাখ মামলার ফলশ্রুতিতেই আপনরা ক্ষমতায়। কমিশন গঠন করে বা দ্রুত দায়িত্ব পালন করে হোক এটার জন্য তো আপনি কিছুই করেননি। আজও আমাদেরকে কেনো আদালতের বারান্দায়, বারান্দায় ঘুরে বেড়াতে হবে?

নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য ১৫-১৬ বছরের যে সংগ্রাম, সে ভোটাধিকার নিয়ে কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে, কেন নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে সংস্কারকে দাঁড় করাচ্ছেন। আমরা ভোটের কথা বললেই আরও কিছুকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। গণতন্ত্র মানেই তো নির্বাচন। বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছেন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনী ওয়াদা কোন ডিসেম্বর-জুনের একধরনের দোলনায় ঝুলছে। সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ডিসেম্বর আর জানুয়ারির মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দোল খাচ্ছে কোন। এটা তো অন্তর্বতীকালীন সরকারের জবাব দেয়া দরকার।

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, দেশে একেবারে সোনায় সোহাগা হয়ে গেছে, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ওয়াসার পানি বদলে সেখানে দুধ বয়ে যাচ্ছে-এমনতো নয়। অনেক জিনিস অনেক দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দুর্নীতিতে একেবারে মুক্ত হয়েছে তা নয়। ফ্যাসীবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্নভাবে প্রশাসনের মধ্যে অবস্থান নিয়ে আছেন। কই এদের ব্যাপারে এতো কথা বলার পরও তো কোনো ব্যবস্থা নেন নাই। জনপ্রশাসনের একজন সচিবের কথা পত্রিকায় উঠলো যে, আমার পাঁচ কোটি কাটা হলেই চলবে। আমার আর বেশি দরকার নাই। তারপরও তিনি বহাল তবিয়তে থাকে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা জানতে পারি বিএনপির সাথে সম্পর্কযুক্ত বা বিএনপির পরিবারের যদি কেউ প্রশাসনের কোথাও থাকে তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয় না। বিএনপির পরিবারের সম্পৃক্ততা পেলে তাকে সাথে সাথে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারমানে কোনো একটা বিশেষ এজেন্ডা, নকশার মধ্য দিয়ে এই সরকার চলছে? এটাই আজকে মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ধোয়াশার তৈরী হচ্ছে। জনগণের সাথে ছলাকলা করলে এটা কিন্তু ফলাফল ভালো হয়না।

দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, দেশ এমনই কি খুব ভালো চলছে? আজকে পলিটেকনিকের ছেলেরা রেললাইন অবরোধ করছে, আমরা এমন কখনো শুনিনি। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা প্রতিষ্ঠানেই ষ্টাইক করে, দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। কিন্তু তারা রেললাইন অরোধ, আর যে লিটেকনিকের সাথে রেল লাইন নেই সেখানে সড়ক অবরোধ করছে। সরকার আলোচনা করে বিষয়টি শেষ করতে পারে কিন্তু জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে কোন? কালকে সাড়ে তিনঘণ্টা লেগেছে পার্টি অফিস থেকে আমার বাসায় যেতে। যেখানে ত্রিশ মিনিট লাগার কথা। সরকার এভাবে পরিচালিত হয় না। শুনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বলে গেছে এ কাজ করা যাবে, এ কাজ করা যাবে না। ডিসি-এসপিরা এ কথা বলেন। শুনি প্রতিটি মিনিষ্ট্রিতে নাকি একটা করে কমিটি আছে। এটাতো ফাংশনাল গভমেন্ট হতে পারে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আমরা সম্মান করি কিন্তু এটাই যদি হয় তাদের কথায় সরকার চলবে-এটাকে বলব নৈরাজ্য। যেদেশে নৈরাজ্য চলে সেদেশে এমন ঘটনা হয়। আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি গণতান্ত্রিক সমাজ ও ন্যায় বিচারের জন্য।

গুম কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গুম কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা কি কাজ করছে। সরকারের জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে একটা আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার ছিল। কোথায় ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরো, সুমন, হুমায়ুন কবির পারভেজ, হিনাররা। এদেরকে ফিরিয়ে পাবার জন্য সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে? শেখ হাসিনার আয়না ঘর থেকে ব্যারিস্টার আবরার, আজমীরকে ফিরে আসতে দেখলাম, ভারত থেকে আমাদের সালাউদ্দিন সাহেবকে আসতে দেখলাম। সালাহউদ্দিনকে শেখ হাসিনা ভারতে ফেলে রেখেছিল। বাংলাদেশকে আর যেন এ খেলা দেখতে না হয়।

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মীর শরাফত আলী সপু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *