Jaijaidin

ইউরোপজুড়ে মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক

Shah Alam Soulav
3 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পণ্য বয়কটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা ও ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে.

বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউরোপীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২০% শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরোশোরে এমন ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।

ইউরোপীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডডিটে প্রায় ৩ লাখ ফলোয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সের বিভিন্ন সুপারশপ থেকে মার্কিন পণ্য নামানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এছাড়া মার্কিন পণ্যের বিকল্প পণ্যের তালিকাযুক্ত “গো ইউরোপিয়ান“ ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে। যেখানে সাধারণ ক্রেতারা মার্কিন পণ্যের বিকল্প সহজেই পেতে পারবে।

গণমাধ্যমগুলো জানায়, ট্রাম্প যেহেতু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের ধ্বংস চাচ্ছে সেহেতু ইউরোপীয় নাগরিকদেরও তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে।

জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে। মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতিরও ইতি ঘটবে।

এছাড়া সদ্য অনুষ্ঠিত জার্মান সংসদ নির্বাচনে জয়ী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন নেতা ও ভবিষ্যৎ জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্সও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউরোপকে স্বাধীন করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

উত্তর ইউরোপের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ ডেনমার্ক মার্কিন পণ্য কোকোকোলা, প্রিংগেলস এমনকি নেটফ্লিক্সের মতো বিনোদনের মাধ্যমও বয়কট করছে। উত্তর ইউরোপের আরেক দেশ সুইডেনেও একই অবস্থা। সেখানেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বয়কটের ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সও যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের পাল্টা সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য দ্রুত ইউরোপীয় কমিশনকে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে ২৭ টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লিয়ন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তে সারা পৃথিবীর বাণ্যিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবো। ইউরোপও ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপের আলোচনা ব্যর্থ হয়।

ইউরোপের গণমাধ্যম জানায়, এপ্রিলের শেষে ইউরোপ আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। এ সময়ের মধ্যে তারা আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৬৫.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে। অন্যদিকে ৫৬৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন “শুল্ক যুদ্ধের“ প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপ প্রাচ্যের দেশগুলোকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদুল আলম।

তিনি বলেন, গেল সপ্তাহে চীনে বড় আয়োজন করে বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে। সেখানে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের পরিণতিতে ইউরোপ ও চীনের অংশীদারিত্ব বাড়লে আখেরে যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯২৯ সালের গ্রেড ডিপ্রেশনের পর থেকে প্রায় ১০০ বছর যাবত পৃথিবীর অর্থনীতি ও রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার পর ইউরোপ, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো মিত্র থেকে শুরু করে চীন, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তাতে মার্কিন আধিপত্যের বিদায় ঘণ্টা বাজা শুরু হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *