যাযাদি ডেস্ক
মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ও এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১১ মার্চ সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর অন্যতম হোতা ফেনীর জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও তার ভাবি জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরীকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদেরকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) দুদক চেয়ারম্যানের কাছে এ আবেদন করেন ফেনীর পরশুরামের মঈন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এতে বলা হয়, গত ১১ মার্চ সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত এক হাজার ১২৮ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ জন মালিক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এই মামলায় স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড ছয় হাজার ৬৫৭ জন প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম, শেখ আব্দুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম. আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও মো. জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া। তবে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের অন্যতম দুই শেয়ার হোল্ডার (২৫ শতাংশ করে) জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও তার ভাবি জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরীর নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের ভাই। জিন্নাত ফাতেমা চৌধুরী হলেন নাসিমের আরেক ভাই জালাল উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। গত দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুষ-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন নাসিম। তার ও পরিবারের সদস্যদের দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের ঘটনায় নাসিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর ইতোমধ্যে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ফেনীর পরশুরামের আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি এ আবেদন জমা দেন।
ফেনী সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার, মাদকের কারবারের মূলহোতা নাসিমের নির্দেশে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতেন দুই ভাই জালাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন ও ভাবি জিন্নাত ফাতেমা। নাসিমের ব্যবসা দেখভাল করেন তারা। জিন্নাত ফাতেমা ও জামাল উদ্দিনের নামে শত কোটি টাকার সম্পদ রেখেছেন আলাউদ্দিন নাসিম।
অভিযোগ আছে, ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মানুষের কৃষিজমি জিম্মি করে কাউকে দিয়েছেন স্বল্পমূল্য, আবার কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে সেই জমি তিনি দখল করে নিয়েছেন। ২০ বিঘা জমির ওপরে গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুকুর রয়েছে চারটি। ফেনীর পরশুরামে ৩০ একর জায়গায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ।