যাযাদিপ্র ডেস্ক
তাঁদের ত্যাগেই আজ ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ। প্রায় দেড় যুগ জাতির বক্ষ চেপে থাকা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে তাঁদেরই বীরত্বে। রক্তস্নাত অভ্যুত্থানে। তাঁদের স্বজনেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন রাজপথে। আর আহত হয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন বেঁচে যাওয়ারা। এই ত্যাগীদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের নিয়ে সোমবার (১৭ মার্চ) ইফতার করলেন সিলেট-৬ আসনের বিএনপি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
গোলাপগঞ্জের বিখ্যাত ঢাকা দক্ষিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্টিত এই ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ২ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহন করেন। তাদের মধ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত বা শহিদদের স্বজনরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন আহত ও তাদের স্বজনরা। আর সুধিজনতো ছিলেনই, ছিলেন গোলাপগঞ্জের সচেতন মহল।
অনুষ্ঠানে ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী আন্দোলন বা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে গোলাপগঞ্জবাসীর অবদান স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি বলেন, এ মাটির ৭ জন বীর নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ভোট ও ভাতের অধিকার হরণকারী স্বৈরশাসক হাসিনার বন্দুকের গুলি তাদের বুক ঝাঁঝরা করলেও তারা দমে যান নি। বরং নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাজপথে। তারা আহত হয়েছেন। কেউ উৎসর্গ করেছেন নিজের হাত বা পা, কেউবা হারিয়েছেন চোখ। তাদের এত এত ত্যাগ বিফলে যেতে পারেনা। আমরা অবশ্যই তাদের স্বপ্নের নতুন এবং শতভাগ গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ পাবেল আহমদ কামরুলের পিতা ঢাকা দক্ষিন উত্তর কানিশাইল গ্রামের রফিক উদ্দিন অশ্রুসজল কন্ঠে বলেন, আমার ৩ ছেলের মধ্যে কামরুল কোরআানে হাফেজ হওয়ার পথে ছিল। বেঁচে থাকলে এবার রমজানে সে কোনো মসজিদে খতম তারাবি পড়াতো। স্বৈরাচারের বুলেট তা আর হতে দিলনা। একথা যখন মনে পড়ে তখন আর বুক ধরাতে পারিনা। ওর মাসহ আমাদের গোটা পরিবারে এখনো চলছে কান্না আর হাহাকার।
আরেক শহিদ মিনহাজের পিতা পশ্চিম দত্তরাইল নিবাসী মো. আলাউদ্দিনের অনুভুতিও একই রকম। তাঁর ৪ ছেলের মধ্যে সবচেয়ে সচেতন ছিল মিনহাজ। বললেন, ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল, অনেক স্বাধ-আহ্লাদ ছিল গোটা পরিবারের। কিন্তু স্বৈরাচারের বুলেটে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। ওর মা এখনো পুত্রশোকে মুহ্যমান। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমাদের একমাত্র শান্তনা, সন্তানের জীবনের বিনিময়ে আমরা একটা ফ্যাসিস্ট মুক্ত দেশ পেয়েছি। একাত্তরের পর আবার স্বাধীন হয়েছি।
তারা ছাড়াও এই ইফতার ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হওয়া অনেকে। তাদের দু’জন কানিশাইলের সফর আলী (৪৫) ও পশ্চিম দত্তরাইলের গাড়িচালক রাজিব আহমদ (২৮)।
জানালেন, এখনো তাদের শরীরে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা। প্রতিটি মুহুর্তে সেই বিভিষিকা তাড়া করে তাদের। দুঃস্বপ্নে ভেঙে যায় রাতের ঘুম। তবে এতকিছুর পরেও তাদের তৃপ্তি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন। বললেন, আমাদের তাজা রক্তে ভেসে স্বৈরাচার দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, এটা অনেক গর্বের, অনেক সম্মানের।
অনুষ্ঠানে শহিদ তাজ উদ্দিনের ভাই ও বোন, শহিদ নাজমুলের ভাইসহ আরও শতাধিক আহত উপস্থিত ছিলেন।
ইফতার ও দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি নোমান উদ্দিন মুরাদ। সঞ্চালনায় ছিলেন সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম খোকন।
এ সময় বক্তব্য দেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান উতু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহতাবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহজাহান আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক জাহেদুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য জাবেদ আহমদ, সিলেট জেলা যুবদল সহ কোষাধ্যক্ষ জিয়া আহমদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক তানজিম আহাদ, যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুর রহমান শিপু, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য আশফাক আহমদ, ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ প্রমুখ।
এছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন।