এম এইচ সৈকত
আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না দেশের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। তবে সেলারি বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই তাদের সেবা কার্যক্রম। বর্তমানে মাহে রমজানের খরচসহ ঈদকে সামনে রেখে বেতন নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
তথ্য মতে, অপারেশন প্ল্যান (ওপি) অনুমোদন না হওয়ায় গত বছরের জুন থেকে এখন পর্যন্ত টানা আট মাসে বেতন হয়নি তাদের। যার কারণে চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনও করেছেন তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে, রাজস্বকরণ খাতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে একসঙ্গে ৯ মাসের বেতন পাবেন তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দেরি হলেও খুব শিগগিরই কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার রাজস্ব খাতে চলে আসবে। কারণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩৮টি অপারেশনাল প্ল্যানের মধ্যে এটি সবশেষ প্ল্যান। আর সব প্ল্যানের মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়ায় একটু বিলম্ব হয়েছে। কারণ অনেক বিভাগেই যারা আছেন, তারা সদ্য নিয়োগ পেয়েছেন।
সিএইচসিপি কর্মীরা জানান, বিগত সরকার ২০১১-২০১৩ সালে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সিএইচসিপিদের চাকরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজস্বভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১০ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে রাজস্বভুক্ত করার জন্য ২০১৪ সালের এপৃলের ১৭ ও ২২ তারিখে আমাদের এসিআর সংগ্রহ ও সার্ভিস বই খুলে দেন তৎকালীন সরকার।
তারা আরো জানান, দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবৎ আমরা শ্রম, মেধা, আন্তরিকতাসহ দায়বদ্ধতাকে মাথায় নিয়ে বঞ্চিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিরলসভাবে কাজ করেছি। ফলে বিগত সরকর জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিত এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এক অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন। অথচ বরাবরই বেতন পাওয়ার আশ্বাস মিললেও বাস্তবায়ন হয়নি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাদের।
বরিশাল সদর উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বেতন না পাওয়ায় ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। যার কারণে পরিবার নিয়ে আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। তার মধ্যেও সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ঋণ করে আর কতদিন চলতে হবে জানি না। শুনেছিলাম ফেব্রুয়ারির শেষে বেতন হতে পারে। এখন শুনি আবার মার্চে। আসলে সঠিক তথ্য এখনো জানি না।’
মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রুজিনা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা নেই। পুরো পরিবার আমার ওপর নির্ভরশীল। অথচ ৮ মাস যাবৎ বেতন নেই। যার কারণে কিস্তির টাকা তুলে চলতে হচ্ছে। কিস্তিও ঠিকভাবে দিতে পারছি না। তাই সবকিছু মিলিয়ে খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি আমরা।’
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘তাদের বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে রাজস্বকরণে শুধু একটা ধাপ বাকি আছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সময় দিলে একটা মিটিং করা হবে। মিটিংয়ের পর নোটিফিকেশন হবে। নোটিফিকেশনের পর অর্থ মন্ত্রণালয় বেতনের টাকা কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের ফান্ডে পাঠানো হবে। তখন বকেয়া সব বেতন তারা একবারে পাবেন। আশা করা যাচ্ছে মার্চের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অলরেডি ১৩ হাজার ৯২৬ জনের একটা তালিকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা আগে ১৪তম গ্রেডের বেতন পেতেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৬তম গ্রেড করা হয়েছে। রাজস্বকরণ হলে তারা ১৬তম গ্রেডেই বেতন পাবেন।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। বর্তমানে সারা দেশে মোট ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। এতে কর্মী আছেন প্রায় ১৪ হাজার।
কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আগে ২৭ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হতো।
অন্তবর্তী সমরকারে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রোগী রেফারেল শুরু হবে। সপ্তাহে দুইদিন দুজন করে ডাক্তারও বসবেন। তারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রেফারেল রোগী দেখবেন। টারসিয়ারি লেভেলে চাপ কমানোর জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যার কারণেই সিএইচসিপিদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে প্রথমে রাজস্বকরণ ও পরে পদায়নের কথা ভাবছে সরকার।