Jaijaidin

ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাইঃ তাহসিনা রুশদী লুনা

Shah Alam Soulav
8 Min Read

হারুন রশিদ, ওসমানীনগর (সিলেট)প্রতিনিধি

“ইলিয়াস আলী হত্যার পর লাশ যমুনায়” চলতি বছরের ৬ জানুয়ারী গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদে ইলিয়াস পরিবার থেকে আনুষ্টানিক কোন প্রতিক্রিয়া না আসলেও, বেঁচে আছেন এম ইলিয়াস আলী এমন এক বিশ্বাস থেকে এখনও বের হতে পারেনি ইলিয়াস পরিবার তথা বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি এম ইলিয়াস আলী এখনও বেঁচে আছেন এবং ফিরবেন সেই বুকভরা আশায় রয়েছেন পরিবারসহ নেতাকর্মীরা।

৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সিলেটের ওসমানীনগরে উপজেলা বিএনপির আওতাধীন ৭নং দয়ামীর ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার দাবী ও সন্ধান কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদী লুনা।

এদিকে গত কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনির সার্পোট ফোরাম ফেইসবুক পেইজ থেকে ওই দিনই একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। গত কয়েকদিন ধরে সে স্ট্যাটাস ব্যাপক ভাইরাল হয়। এবং সেখানে গণমাধ্যম কে নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর দাবি করা হয়, কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে শতভাগ কোনো নিশ্চয়তা মিলেনি, যে ইলিয়াস আলী আর নেই। তাই বিচলিত না হয়ে নামাজ, দোয়া ও ভালবাসায় রাখা বলা হয়। তবে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা মনে করেন ইলিয়াস পরিবারের সেই দাবি ইলিয়াস ফেরার শেষ ভরসা। পৃথিবীর কোন পরিবারই তার পরিবারের সদস্যের অমঙ্গল প্রত্যাশা করেনা।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের শুরুলগ্নে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের পর স্ত্রী ও সন্তানকে গনভবণে ডেকে নিয়ে “রাজনীতির উর্ধ্বে মানবতা” বাক্য পাঠ করে সান্ত্বনা দেয় ততকালীন যুগের স্বৈরশাসক। কিন্তু হাসিনার পৈশাচিক যুগের অবসান হয়েছে জুলাই-আগষ্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে।পরে শেখ হাসিনা জামানার কতিত“আয়না ঘর” থেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আজমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর আহমাদ বিন কাসেম, শ্রমিক নেতা কামরুজ্জামান সহ অনেকেই ভাগ্য ক্রমে ফেরত আসলেও সিলেটের ইলিয়াস আলী ফেরাটা ছিল সবচেয়ে বেশি আগ্রহের ও অপেক্ষার। সেই সময়ে “আয়না ঘরে” বন্ধি থাকা লোকজনের আত্মীয় স্বজনরা তাদের নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজতে শেখ হাসিনার কতিত আয়না ঘরে ভীড় জমান। তখন ইলিয়াস আলীর স্বজনরাও সেই আয়না ঘরে খুঁজতে গিয়েছিলেন ইলিয়াস আলীকে। তখন সিলেটে মাঝে-মাঝে গুজবও রটেছে ইলিয়াস আলীকে পাওয়া গেছে, নিরাপত্ত্বার অজুহাতে তাকে ক্যান্টনমেন্টে রাখা হয়েছে । তখন ইলিয়াস আলীর ছোট ছেলে এম লাবীব শারার ৬ আগষ্ট ২০২৪ তার নিজস্ব ফেসবুক পেইজে একটি স্যাটাস দিয়ে জানান, আমার বাবা, এম ইলিয়াস আলী’র কোনো সন্ধান আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। দয়া করে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। আপনারা দো’আ করুন তিনি যাতে খুব শীঘ্রই আমাদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসেন। একইভাবে ৭ আগষ্ট ২০২৪ আরেকটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন লাবীব শারার সেখানে শিরোনাম দেন “বাবাকে খুঁজে বের করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চলমান রয়েছে”স্ট্যাটাসের চুম্বক অংশ ছিল দয়া করে আমার মা’কে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে বিরত থাকুন। আমি কথা দিচ্ছি, খবর পেলেই আমি আপনাদের দ্রুত জানানোর চেষ্টা করব। সেই সময় লাবীব শারার দুটি পোষ্টই শেয়ার দিয়েছিলেন ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে ব্যারিষ্টার আবরার ইলিয়াস। একই পোষ্ট দিয়েছিলেন তাহসিনা রুশদী লুনাও। একইদিনে ইলিয়াস আলীর বৃদ্ধ মা সূর্যবান বিবি একটি অনলাইন পোর্টালে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন(আমার ফুয়ারে তুকাইরা, এখনও ফাইছইন না) আমার ছেলেকে খোঁজা হচ্ছে, এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কতিত “আয়না ঘরে” অনেক খোজাখোজির পরও ইলিয়াস প্রাপ্তির বিষয়টি আজও অপেক্ষমান।

ইলিয়াস আলী সিলেটের আবেগ, অনুভূতি ও গণমানুষের সবচেয়ে আপনজন ছিলেন। তাই দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীকে সুস্থ্য অবস্থায় মুক্তির দাবিতে সিলেটে নানা কর্মসূচি পালন করেছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। এছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় নিখোঁজের পর থেকে আজবধি একই কর্মসূচি পালন হয়ে আসছে। তার নির্বাচনী এলাকা সিলেট-২ ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ আসনে আন্দোলনের মাত্রাটি ছিল সবচেয়ে বেশি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে নিয়ে ইলিয়াস ফেরার আশা ও শেষ ভরসায় এখনও আছে ইলিয়াস পরিবার তথা বিএনপি। এখনো ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদী লুনার চাঙ্গা মনোবলে নতুন করে ইলিয়াস ফেরার স্বপ্ন দেখছেন নেতাকর্মীরা।ইলিয়াস পরিবার থেকে বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ওসমানীনগর-বিশ্বনাথের রাজনৈতিক সামাজিক সভা-সমাবেশে ইলিয়াস আলীকে নামাজ,দোয়ায় ও ভালবাসায় রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে অচিরে অক্ষত অবস্থায় সকলের প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী ফিরবেন। টিক রমজানে ইফতার মাহফিলে ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত চেয়ে সন্ধান কামনায় মোনাজাত করা হয়। ইলিয়াস আলীর শেষ পরিনতি নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আগে ও পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে মোটেই বিচলিত নয় বিএনপি পরিবার।

এমনি ভাবে গত দিন আরো একটি গণমাধ্যমে রিপোর্ট হয়, শিরোনাম ছিলো “গুম ব্যক্তিরা ভারতের কারাগারে” বাংলাদেশ থেকে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি ভারতের কারাগারে আছে কিনা অনুসন্ধানে নেমেছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কারাগারে থাকা বাংলাদেশি বন্দিদের তালিকা চাইলে দিল্লি ১০৬৭ জনের দিয়েছে। সেই তালিকায় দেশ থেকে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা মিলিয়ে দেখছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে কমিশনের প্রতিবেদনে। সেদিন ঢাকার গুলশানের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ভারত ১০৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে। সেটি গুম সংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরো দেবে। কমিশনের কাছে জোরপূর্বক গুমের শিকার এমন ৩৩০ জনের তালিকা আছে, যারা এখনো ফিরে আসেননি। ওই ব্যক্তিদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। গত বাংলাদেশের ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে গত ২২ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে। গণমাধ্যমের এই সংবাদ ও ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয় এতে ইলিয়াস আলীর কর্মী সমর্থকদের আশা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

প্রসঙ্গত-২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। সঙ্গে নিখোঁজ হন তার গাড়িচালক আনসার আলীও। সিলেটের রাজনীতিক ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। তার নিখোঁজের পরদিন থেকে সিলেটে ৬ দিন এবং এরপর সারাদেশে ৫ দিন হরতাল পালিত হয়।

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা ইলিয়াস আলীর জন্মস্থান বিশ্বনাথে ও ওসমানীনগরে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্বনাথে পুলিশ-আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জনতা চতুরমুখী লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন যুবদল নেতা মনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের নেতা সেলিম আহমদ ও রিকশাচালক বিএনপি সমর্থক জাকির হোসেন।

এই ইস্যুতে আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করতে হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শতশত নেতাকর্মীরা। তবে ১ যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীর।

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ১৫ দিন আগে ঢাকায় একটি মামলার জামিন নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ইফতেখার হোসেন দিনার ও ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদ। তাদেরও সন্ধান মেলেনি আজও, কিন্তু প্রশ্নই থেকে গেলো? কবে সেই অপেক্ষা প্রহর গুনা শেষ হবে ইলিয়াস পরিবার ও সিলেটের কোটি মানুষসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *