চট্টগ্রাম ব্যুরো
ঘোষিত চট্টগ্রামের নতুন তিন কমিটি নিয়ে দু‘ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধীরা। কমিটিগুলো বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সংগঠনটির সঙ্গে যুক্তদের একাংশ। এর ফলে লালখান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একদল শিক্ষার্থী লালখান বাজার ফ্লাইওভারে ওঠার প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে আছেন। তবে সড়কের অন্যপাশগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে কমিটি প্রত্যাখানকারী শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টার মধ্যে ঘোষিত কমিটি বাতিলের জন্য কেন্দ্রকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে লালখান বাজার এলাকায় গিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধকারীরা বলছেন, কমিটি বাতিল না হলে তারা সড়ক থেকে সরবেন না।
চট্টগ্রাম মহানগর কোতোয়ালী থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, আমরা ডাইভারশন দিয়ে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। অবরোধকারীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা জানিয়েছে কেন্দ্রের সাথে কথা বলার পর তারা সড়ক ছাড়বে।
এর আগে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে আগামী ছয় মাসের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরে ৩১৫, উত্তর জেলায় ১১২ ও দক্ষিণ জেলায় ৩২৭ সদস্যবিশিষ্ট তিনটি কমিটির অনুমোদন দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি। তিনটি কমিটিতে মোট ৭৫৪ জনের নাম আছে। কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এ কমিটির অনুমোদন দেন।
৩১৫ জনের ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর নতুন কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজাউর রহমানকে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরিফ মাইনুদ্দিন। তাঁর সাথে যুগ্ম আহ্বায়ক রয়েছেন আরও ২৪ জন। তারা হলেন, মাহমুদুল হাসান মধু (চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি), মোহাম্মদ জোবায়ের (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), জসীম উদ্দিন (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), রিদুয়ান সিদ্দীকী (বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়), তানভীর শরীফ (চট্টগ্রাম কলেজ), আলী আশরাফ (চট্টগ্রাম কলেজ), হামিম আবদুল্লাহ (চট্টগ্রাম কলেজ), আমিন আল রাজি (আইআইইউসি), মিনহাজ উদ্দিন (আইআইইউসি), তারেক হোসেন (প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়), মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (মহসিন কলেজ), আব্দুল কাদের (বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা), ইয়াসিন আরাফাত (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), হাবিবুল কবির সায়েদ (সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি), সাইফুল ইসলাম (মোস্তফা হাকিম কলেজ), আরাফাত চৌধুরী শিবলু (চট্টগ্রাম কলেজ), চৌধুরী সিয়াম ইলাহি (আইআইইউসি), আরমান শাহরিয়ার সৌরভ (আইআইইউসি), নাছির উদ্দিন (চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ), মিফতাহুল জান্নাত শিফা (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ), মুমতাহিনা পিয়া (বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়), জানে আক্তার জেনিফার (আইআইইউসি), সাইফুর রহমান (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), মিসকাত সিকদার (ইসলামিয়া কলেজ)।
কমিটির সদস্য সচিব মনোনীত হয়েছেন সরকারি সিটি কলেজের নিজাম উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির রাশেদুল আলম। তাদের সাথে যুগ্ম সদস্য সচিব রয়েছেন ২৬ জন। তারা হলেন- আরমান শাহরিয়ার শৌরভ (আইআইইউসি), নবাব সলিম উল্লাহ পাপ্পু (চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ), মো. এনামুল হক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), সুলতানুল আরেফিন (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), মো মাইনুল হাসান (চট্টগ্রাম সরকারি মহসিন কলেজ), ইফতেখার হোছাইন (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), মাশফিকুর রহমান তুর্জয় (চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল কলেজ), মোসদালিফা অভি (মহসিন কলেজ), ফাবিউন্নেছা ফাবিহা (ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি), মোহাম্মদ তাওসিফ ইমরোজ (ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি), মো. রিয়াদুল ইসলাম (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), শাহরিয়ার তাহসিন (চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি), রিয়াজ মোহাম্মদ সাকিব (ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি), সাজ্জাদ হোসাইন (আইআইইউসি), ওমর ফারুক সালমান (আইআইইউসি), মুহাম্মাদ ফোরকান (চট্টগ্রাম কলেজ), রাশদান (ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটি), বায়াত উল্লাহ বায়াত (প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়), আছির হামিম ইশমাম (সরকারি সিটি কলেজ), রাহাদুল ইসলাম (সরকারি সিটি কলেজ), হিজবুল্লাহ আল মুজাহিদ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), সাখাওয়াত কবির চৌধুরী (ইসলামিয়া কলেজ), মোহাম্মদ আমান উল্লাহ (সরকারি সিটি কলেজ), শাহরিয়ার হোসেন (বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি), সৈয়দ নুর (ওমর গণি এমইএস কলেজ), সোহান তানজিম (সুইডিস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট)।
নতুন কমিটির মুখ্য সংগঠক মনোনীত করা হয়েছে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির তাওসিফ ইমরোজকে। যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হয়েছেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ফরহাদ বিন হাবিব ইমন। সংগঠক হিসেবে রয়েছেন আরও ৫৮ জন এবং সদস্য হিসেবে আছেন ২০০ জন। কমিটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চট্টগ্রাম কলেজের ফাতেমা খানম লিজা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের নতুন তিন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির দেওয়া ফেসবুক পোস্ট দেখে আরো ক্ষিপ্ত হন চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের একাংশ।
পরে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি গঠনে সমন্বয়ক রাফির ইন্ধন থাকার ইঙ্গিত দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের একাংশ। আর তাদের সঙ্গে একাত্নতা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
কমিটি প্রত্যাখানকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের কমিটিতে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের দোসর ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও সদ্য ঘোষিত মহানগর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, কেন্দ্র থেকে যে তিনটি কমিটি হয়েছে সেগুলো একপাক্ষিক। ২৪র ¯িপরিটের সঙ্গে বেঈমানী করা হয়েছে। আন্দোলনে যারা ছিল তাদেরকে কমিটিতে না রেখে যারা ৫ আগস্ট পরবর্তী বিভিন্ন কর্মসূচিতে এসে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখেছে তাদেরকে আহবায়ক, সদস্যসচিব করা হয়েছে। যারা আন্দোলনে মূখ্যভূমিকা পালন করেছে তাদেরকে মাইনাস করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘোষিত কমিটিতে সনাতনীসহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের কোনোভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী সহযোদ্ধা যারা ফ্রন্ট লাইনে ছিল তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর স¤পূর্ণ দায়ভার কেন্দ্রের। আমাদের যাদের এ কমিটিতে বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে আমরা এ কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি। সে সঙ্গে আমরা ওই কমিটিগুলো থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাসেল আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামে উদ্ভুত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে করা না হলে আমি এবং সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সহযোদ্ধাসহ এই প্লাটফর্ম থেকে সরে যেতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন কমিটির আহ্বায়ক রিজাউর রহমান বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটিতে আরও সদস্য সংযোজন হতে পারে। একটি তালিকা অপেক্ষামানও রয়েছে। তালিকাটি যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান রিজাউর রহমান।