যাযাদিপ্র ডেস্ক
অবশেষে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নামা শুরু হল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী প্রশাসনের ভূত; তবে ষড়যন্ত্র থেমে নেই! বিগত ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হলেও সমাজসেবা অধিদপ্তর চলতেছিল আওয়ামী দোসরদের দ্বারাই। যেন সমাজসেবা অধিদপ্তর ছিল আওয়ামীলীগের শেষ ঘাঁটি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী সচিব ও অধিদপ্তরের আওয়ামী মহাপরিচালকের বদলী হলেও দপ্তরটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে থাকে আওয়ামী দোসররা। এ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করে চাপা ক্ষোভ।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক সংবাদ। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সময়ে পদায়ন পাওয়া কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির সন্তান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ারকে নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। যে বা যারা তার অপকর্ম নিয়ে কথা বলতো তাদের ঘাড়ে নেমে আসতো বদলীসহ নানারকম হয়রানির খবর। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের লেখা একটি সংকলিত বইয়ে এই কর্মকর্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিনে নানান কটুক্তি করে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেন যা নিয়ে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা তার উপপরিচালক (প্রশাসন) পদে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনা তীব্র হলে গত ৩০/০১/২০২৫ তারিখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে সরিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী দোসর দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তাকে। বদলির এই আদেশে অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ও নতুন কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজসেবা অফিসার জানান, বদলির আদেশে অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা খুশি। তবে তিনি একইসাথে গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারতকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের আজ্ঞাবহ ও আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেটের এখনো অধিদপ্তরে সক্রিয় থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাদের বিষয়ে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
গভীর অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় এখনো অতিরিক্ত পরিচালক থেকে শুরু করে অফিস সহায়ক পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছে বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আরেকটি গোষ্ঠী যার নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত পরিচালক। অধিদপ্তরের সকল কলকাঠি নাড়া হয় তারই ইশারা এবং আদেশে। এই গোষ্ঠীর অফিস সমাজসেবা অধিদপ্তরে হলেও আদতে তারা সময় কাটাতো গণভবন, ধানমন্ডি ৩২, আওয়ামীলীগের দলীয় অফিসসহ বিভিন্ন আওয়ামী মন্ত্রী এমপিদের বাসায়। চাকরির বিধানকে তোয়াক্কা না করে তারা আওয়ামীলীগের সকল দলীয় প্রোগ্রামে নিয়মিত অংশ নিতেন।
বিভিন্ন সময়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ ও ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চকিত বক্তব্য দিয়েছেন। মাননীয় উপদেষ্টার বক্তব্যকে কটাক্ষ করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ফোরামে সমালোচনা করেছেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এসব কর্মকর্তারা। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইউটিউবে ভাইরালও হয়েছে। তারা বদলীর এই আদেশ অকার্যকর করতে তৎপর। ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নুরুজ্জামান আহমেদ ও দীপু মনির আমলে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী এই সিন্ডিকেট অধিদপ্তরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া।