যাযাদিপ্র রিপোর্ট
অটোরিকশা হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাঈম নামের এক যুবক। ঢাকার মুগদা থানাধীন পূর্ব মানিকনগর বালুর মাঠ এলাকার একটি বাসা থেকে ওই যুবকের ঝুঁলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশের পোস্টমর্টেম করা হয়। পোস্টমর্টেম শেষে লাশ দাফন করা হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থানে। মানবিক কারণে এতিম যুবকের দাফনের যাবতীয় খরচ বহন করছেন মুগদা থানার ওসি সাজেদুর রহমান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে মুগদা থানা পুলিশ পূর্ব মানিকনগর বালুর মাঠ গলির ৬৯ নম্বর বাসা থেকে নাঈমের ঝুঁলন্ত লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। প্রতিবেশীরা লাশ বুঝে নেওয়ার পর মর্গেই বসে থাকেন। তাদের কাছে লাশ দাফনের কোন টাকা নেই।
মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রানা বড়ুয়া বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করার প্রস্তুতি নিতে পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে দাফন বাবদ সমস্ত টাকা তিনি দিতে রাজি হন। এরপর পরিবারের সদস্যরা লাশ নিযে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করেন।
নিহতের খালু সরোয়ার সাংবাদিকদের জানান, নাঈমের বাবা-মা মারা যান অনেক আগেই। এরপর থেকেই নানী মজিদা বেগমের কাছেই বড় হয় নাঈম। অটোরিকশা হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সে। তারই জেরে নাঈম আত্মহত্যা করতে পারে।
বিষয়টি সর্ম্পকে মুগদা থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহত যুবককের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিন মাস বয়স হওয়ার পর নাঈমের পিতা মাতার মৃত্যু হয়। প্রকৃতপক্ষে নাঈম পুরোপুরি এতিম। তার আপন বলতে কেউ নেই। নাঈম জীবিকা নির্বাহ করতে ঢাকায় চলে আসেন। ভাড়ায় বসবাস করতেন পুর্ব বাসাবোর ওই বাড়িতে। তিনি পেশায় রিকশা চালক। সম্প্রতি নাঈম বেশী রোজগারের আশায় দিন চুক্তিতে অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে চালানো শুরু করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাঈমের বাসার আশপাশের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানান, গত ২৭ জানুয়ারি নাঈম যাত্রী নিয়ে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় যান। সেখান থেকে তার রিকশাটি ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেও অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি। অটোরিকশার মালিক দেলোয়ার হোসেন। তিনি অটোরিকশা ছিনতাই হওয়ার সঙ্গে নিহত নাঈমের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তিনি অটোরিকশার দাম দাবি করেন নাঈমের কাছে। নাঈম অত্যন্ত দরিদ্র। তার পক্ষে কোনভাবেই অটোরিকশার দাম মেটানো সম্ভব না। কিন্ত অটোমালিকের অব্যাহত চাপের মুখে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। তারই জেরে মানসিক চাপে নাঈম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নাঈমের লাশ যাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে তারা প্রকৃতপক্ষে নিহতের আপন কেউ না। প্রতিবেশী। তাদের কাউকে নাঈম খালা, খালো ও নানী বলে ডাকতেন। লাশ বুঝে নেওয়ার পর তাদের কাছে দাফন করা কোন টাকা ছিল না। কারণ আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করতে হলে টাকা লাগে। শেষ পর্যন্ত মানবিক কারণে তিনি নিজ খরচায় এতিম ছেলের লাশ দাফন করিয়েছেন।
ওসি বলছেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে নিউমার্কেটসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।