যাযাদিপ্র রিপোর্ট
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাদেশে দূষণে শীর্ষে গাজীপুর জেলার লবণদাহ নদী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নরসিংদীর হাঁড়িদোয়া। এই নদীটি শীতলক্ষ্যা থেকে উৎপত্তি হয়ে পলাশ ও শিবপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নরসিংদী শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছে হাঁড়িদোয়া নদীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম। এই কাজে সহযোগিতা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন। চালানো হচ্ছে জনসচেতনতা কার্যক্রমও। নদীর তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জনসচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূষণরোধে শিল্পপতিদের সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
নদীপাড়ের মানুষ বলেন, হাঁড়িদোয়া নদীতে একসময় প্রচুর মাছ ছিল। পানি ছিল স্বচ্ছ। শিল্পকারখানার দূষিত পানির কারণে নদীটি ধ্বংস হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষও করা যায় না নদীপাড়ের জমিতে। দূষণে কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে হাঁড়িদোয়ার পানি। বাতাসে দুর্গন্ধ। এই দূষণের কারণে নদী তীরবর্তী মানুষজন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে। মাছ না থাকায় কাজ হারিয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন অসংখ্য জেলে।
পরিবেশবিদরা বলেন, শুধু নদীর আশপাশের বর্জ্য, কচুরিপানা পরিষ্কার কিংবা দখল-উচ্ছেদ করলেই হবে না। নদীতে শিল্প-কারখানার দূষিত পানি ফেলা বন্ধ করতে হবে।
তারা আরো বলেন, নদীটি সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার শিবপুর উপজেলার ভেলানগর ব্রিজ থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার ঘোড়াদিয়া সাকুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত। ইটিপির ব্যাপারে প্রশাসন জোরালো ভূমিকা রাখছেন না। শিল্প-মালিকরাও এ বিষয়ে নীরব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, সারাদেশের নদীগুলো দূষণের শিকার। নরসিংদীর হাঁড়িদোয়াও তেমন একটি নদী। এজন্য শিল্পমালিকরা দায়ী। তবে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর দায় এড়াতে পারে না। এ ছাড়া নদীকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ডাস্টবিন মনে করে। যথাযথ কোনো মনিটরিং নেই।
নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অঞ্জন দাশ বলেন, হাঁড়িদোয়া নদীর দূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ও তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলছে।
শিল্প-কারখানার ইটিপি কার্যকর করার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেয়া হয়েছে। শিল্প-মালিকরা সবাই ইটিপি চালু রাখবেন, কথা দিয়েছেন। অন্যথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।