সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
গ্রামে-গঞ্জে শত প্রতিকূলতার মাঝেও যারা পূর্ব পুরুষের চর্চা বাঁচিয়ে রেখে শিল্পকর্মের আদি ফর্ম অবিকৃত রেখে টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন তাদের অংশগ্রহণে সোনারগাঁয়ের লোকজ উৎসব। আয়োজনের নামই মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এর স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাসব্যাপী আদি ও অকৃত্রিম এ লোকজ মেলার আয়োজন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সুত্র জানায়, তৃণমূল থেকে শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে দক্ষ। নিবেদিত প্রাণ। পূর্বসূরিদের কাজ, লোক উপাদান শহুরেদের সামনে গর্বের সঙ্গেই তুলে ধরছেন তারা।
সোনারগাঁয়ের সুচিশিল্পী হোসনে আরার কাঁথাস্টিচে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজ দেখে মনে হবে এ যেন কাজ নয়। সুইয়ের প্রতিটি ফোঁড় যেন গ্রামের অবহেলিত নারীর জয়ের গল্প বুনা! দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। নিজের হাতের কাজ ছাড়াও আছে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ। তিনি এবার জয়নুল আবেদিন আজীবন সম্মাননা ২০২৪ এ ভূষিত হয়েছেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী মেলা উদ্বোধনের দিন ১৮ জানুয়ারি এ সূচিশিল্পীর হাতে তুলেন দেন ৩ লাখ টাকা ও দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের মেডেল।
ধাতব শিল্পের নিদর্শন নিয়ে মেলায় যোগ দিয়েছেন কুমিল্লার মানিক সরকার। কাসা পিতলের কাজ করেন। তার স্টলে গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন অনুষঙ্গ। বিভিন্ন প্রাণীর মডেল, দেব-দেবীর মূর্তি দিয়ে সাজানো। প্লাস্টিক ও মেলামাইনের যুগে কোনরকমে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন বলে জানান তিনি। তিনি এবার জয়নুল আবেদিন আজীবন সম্মাননা ২০২৪ এ ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন ৩ লাখ টাকা ও দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের মেডেল।
মৃৎশিল্পের নিদর্শন নিয়ে এসেছেন কিশোরগঞ্জের সুনীল পাল। বয়স ৭০। পঞ্চাশ বছর ধরে পুতুল বানান তিনি। তার স্টলে কলসি কাখে চলা গ্রাম্য বধূ, বেদে নারী, ধান বানার চিত্র। আছে ইংরেজরাও। শিল্পাচার্যের জয়নুলের সঙ্গে বুঝাপড়া ছিল সুনীল পালের। শিল্পাচার্যের সামনে বসে সোনারগাঁয়ে কাজ করেছেন সুনীল। শিল্পাচার্যের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, অসাধারণ মানুষ ছিলেন। বলতেন, নিজের জ্ঞান দিয়ে কাজ কর। ভাল না হলেও অসাধারণ বলতেন। উৎসাহ দিতেন। মেলায় আছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি সহ আছে আরো অনেক কুটিরশিল্প।