যাযাদিপ্র রিপোর্ট
বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশে এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া এই দূষণের কারণে হার্ট ডিজিস, স্ট্রোক, হাঁপানি-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি এন্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঈজঊঅ ও ঈবহঃবৎ ভড়ৎ অঃসড়ংঢ়যবৎরপ চড়ষষঁঃরড়হ ঝঃঁফরবং (ঈঅচঝ)। সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে সূক্ষ¥কণা বায়ুদূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সিআরইএর গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় স্থান পায়। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান (পিএম ২.৫) ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম। যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। বায়ুর এমন চরম দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। পাঁচ বছর কম বয়সি শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
২০২২ সালে সরকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণার মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। যা বায়ুর মান অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ডব্লিউএইচও-এর ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ হ্রাস পাবে। যা প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করবে। সেই সঙ্গে হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট ও অকাল প্রসব এবং বার্ষিক ২৬৩ মিলিয়ন অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো যাবে।
বাংলাদেশে পিএম ২.৫-এর সংস্পর্শের প্রভাবে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে রোগবালাই। হাঁপানির কারণে প্রতি বছর ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়ে থাকে। নয় লাখ অকাল প্রসব এবং বার্ষিক সাত লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে বিরাট অর্থনৈতিক ব্যয় জড়িত। মাঝারি মেয়াদে ২০০৫ সালে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা উচিত। কয়লা ও ডিজেলের মতো কার্বণ নিঃসরণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করা উচিত।
সিআরইএর বায়ুমান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার অপরিণত শিশু, কম ওজনের শিশুর জন্ম এবং শিশুমৃত্যু ঘটছে।
ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি শুধু মানবদেহকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সুইডিশ দূতাবাস বাংলাদেশের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম বলেন, বায়ুদূষণ ঢাকা এবং বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর অন্যতম গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার উৎপাদন ব্যবস্থা, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা ও প্রণোদনা তৈরি, কার্যকর গণপরিবহন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, পিএম ২.৫ বাংলাদশে নিঃসন্দেহ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বায়ুদূষণ কমাতে সরকার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন দর্শনে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। এজন্য আইন সংস্কারসহ এর কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
প্রেস কনফারেন্সে আরো বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ২৫০ শয্যা টিভি হসপিটালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ও শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুল ইসলাম।