Jaijaidin

৬ বছর পর এক টেবিলে বিএনপি বিজেপি

Shah Alam Soulav
7 Min Read

বিশেষ প্রতিনিধি

দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। প্রয়াত মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর পর দলের হাল ধরে ছেলে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও ছিলেন বিএনপির সঙ্গে। কিন্তু ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদে যোগ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের মে মাসে বিএনপির সঙ্গে জোট থেকে বের হয়ে যান পার্থ। দীর্ঘদিন পর আবারও বিএনপির কাছাকাছি এলেন তরুণ এই রাজনীতিবিদ।

গতকাল রোববার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিজেপিও আমন্ত্রণ পায়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সদলবলে যোগ দেন আন্দালিব রহমান পার্থ।

বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হওয়া বৈঠকে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বে ১০ সদস্য প্রতিনিধি দল যোগ দেন। বাকিরা হলেন- মহাসচিব মতিন সাউদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মোস্তফা তামজিদ, ওয়াশিকুর রহমান, সালাউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সোহেল আসিফ, এবিএম আজিজুল হক, অ্যাডভোকেট গোলাম রাব্বানী, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান, ফয়সাল তাহের। বৈঠকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াঁজো কমিটি প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।

বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন,সংস্কার প্রস্তাবের যেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে তার বাইরে সংস্কার করার কোনো সুযোগ নেই । তিনি বলেন, এর বাইরে কিছু করতে হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে আসতে হবে। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তা কেন জাতির সামনে তুলে ধরা হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, এরই মধ্যে অনেক সময় চলে গেছে। আলোচনা শেষ। জাতিকে জানান কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, জাতি জানুক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তো আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। সবাই একমত হতে হবে, এটা যারা চিন্তা করে সেটা তো বাকশালি চিন্তা। সেটা শেখ হাসিনার পিতা করেছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যে প্রচেষ্টা সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে কথা বলছি। তারাও আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একে-অপরের সঙ্গে কথা বলতে হবে, সংলাপ করতে হবে। যেটা এত বছর বাংলাদেশে ছিল না সেটাই আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। সংস্কার নিয়ে কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা এখন জনগণের দাবি উল্লেখ আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, সেটাতে সরকারকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, সেগুলোতে সবাই একমত হবে, সেই চিন্তা করে তো নির্বাচন পিছিয়ে নিতে পারেন না। কিংবা ঘোলাটে পরিবেশ করতে পারেন না।

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশে গত ১৬-১৭ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। যেটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ করেছিল। সেটা যেন এই বাংলাদেশে না থাকে, মানুষ যেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান হবে সেটা আমরা উপলব্ধি করি।

পার্থ আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার আমাদের সরকার, আমাদের আন্দোলনের সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সরকার। তারা জনগণের সরকার হলেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তবে, আমরা তাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো।

বিজেপির চেয়ারম্যান বলেন, ৭ আগস্ট থেকে আমরা সরকারকে বলে আসছি, আপনারা একটি নির্বাচনি রোডম্যাপ দিন। নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরাও সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং বড় সংস্কার জনগণের রায় ছাড়া হলে সেটা শক্তভাবে থাকবে না। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বড়-বড় রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো নিয়ে সনদ হতে পারে উল্লেখ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, কারণ জনসম্পৃক্ত সংস্কার যদি আগামী সরকার না করে তাহলে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে।

পার্থের মতে, সংস্কারের নাম বলে নির্বাচনকে পেছানো কিংবা একটা দায়িত্বশীল সরকার যখন বলে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে- এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে না। আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক। দেশের মানুষের মধ্যে আবার এই ধরনের চিন্তা না আসুক যে, আবার কবে নির্বাচন হবে।বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াঁজো কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু।

যে কারণে বিএনপি জোট ছাড়েন পার্থ: ভোলার সংসদ সদস্য নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে বিজেপি গঠনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেন। মঞ্জুরের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে পার্থ দলের হাল ধরেন। সেই সময় থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোটেই ছিল বিজেপি। ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। পরে আরও দুটি দল তাতে যোগ দিলে ২০ দল হয়। বিজেপি পুরোটি সময় বিএনপির সঙ্গেই ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি কামাল হোসেনের গণফোরামসহ আরও তিনটি দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে পুরনো জোটে টানাপড়েন শুরু হয়। তবে ২০ দলীয় জোট থেকে বিএনপির নতুন জোটকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়া হয়েছিল।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন তারা একসঙ্গেই করেছিল, ঢাকার একটি আসনে পার্থ প্রার্থীও হয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীকে। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানেও এক ছিলেন তারা। জোট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি ও গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জোটে আরও টানাপড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন পার্থ। ওই সময় জোট ছাড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে (বিএনপি), ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ড শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়। প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বিএনপি যে সংসদে যাবে, এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউ জানে না। এসব কারণেই আমি জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে শেখ হাসিনার আত্মীয় (ফুফাতো বোনের ছেলে) আন্দালিব রহমান পার্থ জোট ছাড়লেও বরাবরই বিভিন্ন টক শোতে বিএনপির পক্ষে কথা বলেছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি যাননি। এমনকি জুলাই আন্দোলনে তিনি গ্রেফতারও হন। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি কারামুক্ত হন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *