Jaijaidin

হাসনাতের সঙ্গে সারজিসের দ্বিমত, সেনানিবাসে বৈঠক নিয়ে দিলেন নতুন তথ্য

Shah Alam Soulav
6 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

গত ১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কী ঘটেছিল জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি দলের আরেক সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের কিছু অংশে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এ ছাড়া ওই বৈঠকের কথাগুলো যেভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জনসম্মুখে এসেছে, এই প্রক্রিয়াটি সমীচীন হয়নি বলে মনে করেন সারজিস।

আজ রবিবার দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে ১১ মার্চের বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরেন সারজিস আলম।

তিনি জানান, ওই দিন সেনানিবাসে তাদের (হাসনাত ও সারজিস) ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে এনসিপির আরো একজন নেতার ওই বৈঠকে যাওয়ার কথা ছিল, ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে যেতে পারেননি। তবে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি সারজিস।

সেনাপ্রধানের একটি বক্তব্যের পর তারা নিজেরাই সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেনানিবাসে যান বলে ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সারজিস বলেন, ‘সেদিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। সেনা ভবনে সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম। সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।

ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের সঙ্গে তার কিছুটা দ্বিমত আছে জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির অভিমতকে একেকজন একেকভাবে অবজার্ভ করে। হাসনাত সেদিন তার জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অবজার্ভ ও রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে, আমার সে ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিমত আছে।’

তিনি বলেন, “আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ দেওয়ার আঙ্গিকে দেখি না, বরং ‘সরাসরি অভিমত প্রকাশের’ মতো করে দেখি।’ ‘অভিমত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেওয়া’ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

সারজিস আরো বলেন, “পাশাপাশি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য ‘চাপ দেওয়ার’ যে বিষয়টি এসেছে সেখানে ‘চাপ দেওয়া হয়েছে’ এমনটি আমার মনে হয়নি।

বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।”
‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে ওই বৈঠকে কথা হয়েছিল জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কি না, এই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ থাকলে কী হবে না থাকলে কী হবে, আওয়ামী লীগ এই ইলেকশন না করলে কবে ফিরে আসতে পারে কিংবা আদৌ আসবে কি না এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। এসব সমীকরণে দেশের ওপরে কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেসব নিয়ে কথা হয়েছিল।’

তবে হাসনাত তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছিলেন, রাজনীতিতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।

হাসনাতের ওই দাবি নিয়ে সারজিস লিখেছেন, ‘যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে আমি মনে করি- কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না।’

হাসনাত তার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে- ‘আলোচনার এক পর্যায়ে বলি- যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দেবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি।’

এই আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এনসিপি নেতা সারজিসও। তবে তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘কিন্তু আমাদের রুমে বসে হওয়া কনভারসেশন হঠাৎ এককভাবে শেষ করে যখন সেনাপ্রধান উঠে দাঁড়ালেন এবং রুম থেকে কথা বলতে বলতে বের হয়ে এসে যখন আমরা গাড়িতে করে ফিরব তার পূর্বে বিদায় নেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কনভারসেশন হয়েছে। সেনাপ্রধান রেগে যাওয়ার সুরে এই কথা বলেছেন বলে আমার মনে হয়নি বরং বয়সে তুলনামূলক বেশ সিনিয়র কেউ জুনিয়রদের যেভাবে অভিজ্ঞতার ভারের কথা ব্যক্ত করে সেই টোন এবং এক্সপ্রেশনে বলেছেন।’

এই পোস্টে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এনসিপি, অন্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সারজিস আলম।

সেনানিবাসে একান্ত বৈঠকের কথা ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া হিসেবে আসা ঠিক হয়নি মন্তব্য করে সারজিস বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটি অভিমত প্রকাশ করতে চাই। আমি ভুল হতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমার এটিই সঠিক মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ না কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই প্রাইভেসি তারা বজায় রাখে। আমাদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের সরাসরি দ্বিমত থাকলেও আমরা সেগুলো নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে এখনকার মতোই রাজপথে নামতে পারতাম। অথবা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি আমাদের সঙ্গে ঐকমত্যে না পৌঁছলে আমরা শুধু আমাদের দলের পক্ষ থেকেই এই দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে পারতাম। কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি। বরং এর ফলে পরবর্তী সময়ে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমার এই বক্তব্যে আমার সহযোদ্ধা হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত এসেছে। এটার জন্য অনেকে আমার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যক্তিত্ব স্রোতে গা ভাসানোর মতো কখনোই ছিল না। ছিল না বলেই আমরা হাসিনা রেজিমের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে তার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কমিটমেন্ট আমাদের আছে। কিন্তু সহযোদ্ধার কোনো বিষয় যখন নিজের জায়গা থেকে সংশোধন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি, তখন সেটাও আমি করব।’

ওই পোস্টে ‘আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন এনসিপির এই নেতা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *