Jaijaidin

হাজারীবাগের ভবনটিতে ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না , নোটিশ পায় কয়েকবার

Shah Alam Soulav
4 Min Read

যাযাদিপ্র রিপোর্ট

ঢাকার হাজারীবাগের ফিনিক্স লেদার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির মালিককে ফায়ার সার্ভিস একাধিকবার সর্তক করেছে। তা আমলে না নিয়ে বেআইনীভাবে কাজ চলছিল গুদামটিতে।

ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের সহায়তায় টানা পৌঁনে ৩ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীলরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যানা যায়নি। তবে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকার হাজারীবাগ ট্যানারী মোড় সংলগ্ন কাঁচা বাজার এলাকার একটি সাত তলা ভবনের পাঁচ তলায় থাকা ফিনিক্স লেদার কোম্পানীর গুদামে আগুন লাগে। শুক্রবার থাকায় গুদামে কর্মরতদের মধ্যে অধিকাংশ জনই ছিলেন ছুঁটিতে। ঘটনার সময় গুদামে মাত্র কয়েক জন লোক ছিলেন শুধু দেখাশোনার জন্য। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার পবিত্র জুমা’র নামাজ আদায় করতে মসজিদে গিয়েছিলেন। যে কারণে গুদামে মাত্র ৫ জন ছিলেন।

স্থানীয়রা বলছিলেন, প্রথমে গুদামের ভেতরের দিক থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। ক্রমেই ধোঁয়ার পরিমাণ বাড়ায় গুদামে থাকা লোকজন দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিরাপদ জায়গায় নেমে যান। মুর্হুতেই ভবনটির ওই ফ্লোরে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে যায়। কারণ হাজারীবাগের ওই এলাকার অধিকাংশ ভবনগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে লাগোয়া। আশপাশের ভবনে থাকা বাসিন্দারা দ্রুত নেমে নিরাপদ জায়গায় চলে যান।

ভবনটির অনেক দরজা জানালায় কাঁচ লাগানো ছিল। তাপে কাঁচ ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ছিল। এতে করে ভবনের আশপাশের রাস্তায় মানুষজন ও যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। এ সময় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাবের তরফ থেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে ভবনটির আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়।

ততক্ষণে আশপাশের মসজিদগুলোতে পবিত্র জুমার নামাজ চলছিল। নামাজ শেষে গুদামে থাকা এবং ভবনটির আশপাশে থাকা বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জাানা গেছে, প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্ত কোনভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পরে আরও ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত মোট ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করতে থাকে। এ সময় পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে। সম্মিলিত চেষ্টায় টানা প্রায় পৌঁনে তিন ঘন্টা পর বিকেল পৌঁনে ৫টার দিকে আগুনে নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেনস ও মেইনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, আগুনে নেভানে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কারণ ভবনটিতে কোন সেফটি প্ল্যান ছিল না। ভবনটি পুরাতন। এছাড়া ভবনটিতে চামড়া প্রস্তুতকরণ, গার্মেন্টস সামগ্রীর কাঁচামাল, প্লাস্টিক, গার্মেন্টস পণ্য ও উপরের দিকে জুতার তৈরির কারখানা আছে। জুতা তৈরির কারখানায় প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। এসব রাসায়নিক পদার্থ আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে এবং ভয়াবহ আকার ধারণ করতে সহায়তা করেছে।

তিনি আরও বলেন, পুরোপুরি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সম্মিলিত চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা ছিল। এতে করে অনেকের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারতো। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগুন নেভাতে নিরলস চেষ্টার পরেও প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে। পানির সংকট, সরু রাস্তার কারণে বড় গাড়ি ঢুকতে পারেনি। এছাড়া উৎসুক মানুষের ভিড়ের কারণে সময় কিছুটা বেশী লেগেছে। যদিও বেশ কয়েক দফায় ভবন মালিককে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে আগাম সর্তক করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অমান্য করে বেআইনীভাবে ভবনটিতে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন ভবন মালিক।

তিনি আরও জানান, ভবনটির ৫, ৬ ও ৭ তলা পর্যন্ত আগুন ছড়িয়েছিল। নিচের দিকে আগুন ছড়ায়নি। বাতাসের কারণে আগুন উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা জ্বলন্ত বিড়ি সিগারেট থেকে আগুন লাগতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধারণা, আগুনে ভবনটিসহ সেখানে মালামাল মিলিয়ে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *