যাযাদি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভায় গণঅধিকার পরিষদের নতুন আহবায়ক কমিটিতে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। বরিশালের বাসিন্দা মোঃ রেজাউল আকন যিনি কিছু বছর পূর্বে সোনারগাঁয়ে এসেছেন কারেন্টের মিস্ত্রীর শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে তিনি বনে গেছেন ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের সোনারগাঁও পৌরসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সদস্য সচিব! এমনকি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে পৌরসভার চা-সিগারেট বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিককে! যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সোনারগাঁয়ের মানুষজন। সোনারগাঁ উপজেলা আর পৌরসভার রাজনীতিতে কোন দলের ইতিহাসে এমনটি দেখেন নি বলে তারা জানান।
গতো ২১ এপ্রিল সোনারগাঁও পৌরসভা গণঅধিকার পরিষদের দ্বিতীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আক্তার হোসেন। এর আগে সোনারগাঁও পৌরসভায় গতো ১লা ফেব্রুয়ারিতে গণঅধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুর আসার পরবর্তীতে প্রথম আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদ।
ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ ও মোঃ আক্তার হোসেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত সোনারগাঁও পৌরসভার দ্বিতীয় এই কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন ঘোষিত এই কমিটির অধিকাংশ সদস্য রাজমিস্ত্রী, বটবটি চালক এবং বহিরাগত। বিতর্কিত এই কমিটির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক পড়াশোনা করেছেন সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত আর পেশায় টং দোকানের চা-সিগারেট বিক্রেতা। সদস্য সচিব মোঃ রেজাউল আকনের বাড়ি বরিশালে, পড়াশোনার ইতিহাস জানা না গেলেও কয়েকবছর হয় রোজ ভিত্তিক কারেন্টের মিস্ত্রী হিসেবে সোনারগাঁয়ে এসে কাজ করছেন। সোনারগাঁও পৌরসভায় যেখানে ভিপি নুর এসেছিলো সেখানে এমন লোকদের দিয়ে কমিটি ঘোষনা করায় জনসাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
পৌরসভার অনেকে জানান, তারা ভিপি নুরকে অনেক পছন্দ করেন ভিপি নুরের পৌরসভা মাঠের জনসভায় তারা নিজ আগ্রহে গিয়েছিলেন, কিন্তু সোনারগাঁয়ের স্থানীয় বাসিন্দা বাদ দিয়ে এমন বহিরাগত লোকদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে তার দলের পৌরসভা কমিটি ঘোষণা হওয়ায় তারা হতাশ, এর মাধ্যমে ভিপি নুরকে ছোট করা হয়েছে আর সোনারগাঁ বাসিকে অপমান করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনারগাঁ উপজেলার গণঅধিকার পরিষদ সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা গণঅধিকার পরিষদ বরাবরই সোনারগাঁ উপজেলাকে অপমান করার জন্য স্বৈরতান্ত্রিক ভাবে সবকিছু করে, ভিপি নুর যেদিন সোনারগাঁ আসে সেদিনও তারা না এসে ভিপি নুরকেও অপমান করে দিয়েছেন। তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নারায়ণগঞ্জ বসে থেকে তাদের সুবিধাভোগী জেলা কমিটির কয়েকজনকে দিয়ে বিভিন্ন উপজেলার প্রতি বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে ও জেলার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করতে বাধ্য করার মতো বিতর্কিত কাজ করে যাচ্ছেন। কোন উপজেলার তৃণমূলের কাছে তারা যানও না কারো মতামতও নেন না যোগ্য দক্ষ সমাজিক ভাবে সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য কোন নেতৃত্ব দলে নিয়ে আসতেও কোন বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন না। তাদের দূর্ব্যবহারে আর বৈষম্যমূলক কাজের ফলে রূপগঞ্জ উপজেলা গণঅধিকারের আহ্বায়ক ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোনারগাঁকে ছোট করে দেখানোর জন্য পৌরসভার মতো ইউনিটে মূল দলের কমিটিতে সব শ্রমিক অধিকারের লোক আর বহিরাগত লোক ঢুকিয়ে বিতর্কিত এই নতুন পৌরসভা কমিটি করেছে।
জেলা কমিটির এই ধরনের স্বেচ্ছাচারি বিতর্কিত কর্মকান্ডের ফলে দলের ইমেজ নষ্টের পাশাপাশি ভিপি নুর আসায় সোনারগাঁয়ে দল যে মর্যাদার জায়গায় পৌছে গিয়েছিলো তাও নষ্ট হয়ে গেছে, দলে যোগ্য সামাজিক ভাবে সম্মানিত গ্রহণযোগ্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করাও কঠিন হয়ে গেলো। পৌরসভার মোট জনগণের চার ভাগের এক ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী, ভিপি নুর আসলে সনাতনীরা ব্যপকভাবে উপস্থিত থেকেছিলো অথচো তাদের কোন প্রতিনিধি কমিটিতে না রেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক অবঙ্গা প্রদর্শন করেছে। জেলা ইউনিট এসব ইচ্ছাকৃত ভাবে করছে স্থানীয় কারোসাথে কথা না বলে স্থানীয় সুশীল সমাজের পরামর্শ না নিয়ে। সামনে নির্বাচনে আর ভোটের সময় এমন বহিরাগত লোক আর টং দোকানদার দিয়ে পৌরসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা গণঅধিকারের পক্ষে ভোট চাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে যা দলকে হাসিঠাট্টায় রূপান্তরিত করে মানুষকে দলীয় প্রতীক ট্রাক মার্কায় ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করবে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ভিপি নুরের মতো নেতার দলকে এতোটা খারাপ ভাবে সোনারগাঁয়ে পরিচিত করে দেয়ায় নিন্দা জানাচ্ছি, বিতর্কিত এই সোনারগাঁও পৌরসভা গণঅধিকার পরিষদ কমিটি জেলা কমিটির লেজুড়বৃত্তির উদ্দেশ্য সাধন করলেও স্থানীয় জনসাধারণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদ গঠনের পর বর্তমান দলের সভাপতি ঢাবির সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর সোনারগাঁ উপজেলায় সোনারগাঁও পৌরসভা মাঠে প্রথমবারের মতো আসেন এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁও পৌরসভায় গণঅধিকার পরিষদের সর্বপ্রথম কমিটি ঘোষণা করা হয় যা পরে সাংগঠনিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার নামে সোনারগাঁ উপজেলা কমিটির সাথেই বিলুপ্ত করা হয়। এরপর নতুন উপজেলা কমিটি ঘোষণার আগেই এই বিতর্কিত পৌরসভা কমিটি ঘোষণা করা হয় বলে জানা যায়।