Jaijaidin

সরকারের দেওয়া সময়েই নির্বাচন সম্ভব : নাহিদ ইসলাম

Shah Alam Soulav
5 Min Read

যাযাদিপ্র ডেস্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘সামনে একইসঙ্গে আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান এবং গণতন্ত্রে উত্তরণ করতে পারব। সকল কিছুই দ্রুত সময়ের মধ্যে হওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যে সময়ের কথা বলেছে, সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে যাওয়া সম্ভব।

কিন্তু নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ করতে হবে। নির্বাচনের জন্য আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও মিডিয়ার নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে নানা বিষয় মতপার্থক্য হতে পারে, তর্ক-বিতর্ক হতে পারে।

কিন্তু এতে গণতান্ত্রিক সম্পর্ক, সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়ায় যেন কোনো ধরনের ছেদ না পরে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে সম্পূর্ণরুপে বিলুপ্ত করা বা পরাস্ত করা সম্ভব নয়।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রুপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে এনসিপি আয়োজিত ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিক, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাক্টিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।

নাহিদ বলেন, ‘আমরা যাতে ভুলে না যাই দেশের বিপদ এখনও কাটেনি।

বাংলাদেশবিরোধী শক্তিরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ এবং অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে অনৈক্য সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া, লুটেরা ও ষড়যন্ত্রকারীদের নানাভাবে সুযোগ করে দিতে পারে। তাই আমরা যাতে এ বিষয় সবসময় সচেতন থাকি। আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে জনগণের কাছে যাব। সেখানে আমাদের নীতিগত বিরোধ হবে।

কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের যে ঐক্যের জায়গা তৈরি হয়েছে আমরা সেই ঐক্যের জায়গা থেকে কখনোই সরে যাব না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বন্দোবস্তের কথা বারবার বলে যাচ্ছি। যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল তাদের দ্রুত বিচার আমাদের সকলের প্রত্যাশা। দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম আমরা দেখতে চাই। বিচারের মাধ্যমেই আমরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে চাই। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণ ৫ আগস্টেই রায় দিয়ে দিয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার জাতীয় কমিশনের মাধ্যমে যে সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের প্রস্তাবিত যে জুলাই সনদ সেই জুলাই সনদের আমরা দ্রুত কার্যকর দেখতে চাই। জুলাই সনদ কার্যকরের মধ্য দিয়ে সংস্কারের রূপরেখা আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। আমরা চাই সংবিধান ছাড়া অন্যান্য যে সংস্কারগুলো রয়েছে সেগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।’

নির্বাচনের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছি সামনের নির্বাচনে একইসাথে আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন সংবিধান এবং গণতন্ত্রে আমরা উত্তরণ করতে পারব। সকল কিছুই দ্রুত সময়ের মধ্যে হওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করছি। সরকার যে সময়ের কথা বলেছে সকল কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করে এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিকে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু নির্বাচনের আগে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উত্তরণ করতে হবে। নির্বাচনের জন্য আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও মিডিয়ার নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশ পুনর্গঠন একদিনে সম্ভব নয়। আমরা পুরনো রাজনীতিতে ফেরত যেতে চাই না, আমরা বাংলাদেশের রাজনীতির আমূল পরিবর্তন চাই। মুজিববাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও সম্প্রীতির পক্ষে আমরা জাতীয় ঐক্য নির্মাণ করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটেছে। নতুন রাজনীতিতে চাঁদাবাজদের স্থান হবে না, হানাহানি-টেন্ডারবাজি চলবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী যত শক্তি আছে সবাই একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করবে। আমাদের রাজনৈতিক মিশন-লক্ষ্য আলাদা হতে পারে। কিন্তু আমরা এটা বলতে পারি যে আমরা আজকে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছি সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী পক্ষ। বাংলাদেশের যারা জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাইকে এক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে দেখতে চাই না। সকল দলকে এ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হিসেবে রেখে যেতে পারব। আমরা একটা দীর্ঘ লড়াই করে এসেছি। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে দিয়ে গেছি। নিপীড়ন, ঘুম, খুন হত্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আমরা সবাই মিলিত হতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, এই রমজানের ইফতারের মধ্যে দিয়ে আমাদের যে বিভেদ রয়েছে সেটি দূর করতে পারব। আমরা একটা সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আশা করছি খুব শিগগিরিই আমাদের প্রত্যাশিত সংস্কার সম্পন্ন হবে।’

এনসিপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুল ইসলাম, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুফতি মোসাদ্দেক বিল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *