Jaijaidin

রোমানিয়াসহ পূর্ব ইওরোপের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

Shah Alam Soulav
5 Min Read

গাফফার খান চৌধুরী

আদম বেপারীদের সিন্ডিকেটের কারণে বিদেশে বিনষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। এতে শ্রমবাজারসহ ব্যবসা-বাণিজ্য হারাচ্ছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, এই সিন্ডিকেটের গোড়া এত শক্ত যে, তাদের কথামতো না চললে তারা বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরও হেনস্তা করে থাকে। এসব কাজে তাদের সহযোগী হয়ে থাকেন দূতাবাসেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্প্রতি এই সিন্ডিকেটের কারণে পূর্ব ইওরোপের দেশগুলোতে শ্রমবাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রেমিটান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রসারিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আগামী কয়েক বছর বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, রোমানিয়াসহ পূর্ব ইওরোপীয় দেশসহ ওই অঞ্চলে অন্তত ১০ লাখ বিদেশি কর্মীর চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিশাল এই বাজার ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।

সূত্র বলছে, এসব দেশে কর্মীর আবাসন ও খাবারের দায়িত্ব নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় পশ্চিম ইওরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। যে কারণে এসব দেশে বাংলাদেশিদের যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে রোমানিয়ায়। এ জন্য সরকারের তরফ থেকে রোমানিয়াসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে, সে সব দূতাবাসের শ্রম উইং শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোমানিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। চলতি বছর রোমানিয়া তিন লাখ বিদেশি শ্রমিক নেবে। বাজারটি ধরতে তৎপর বাংলাদেশ সরকার।

সূত্রটি আরো জানায়, কিছু অসাধু আদম বেপারীর সিন্ডিকেটের কারণে রোমানিয়াসহ পূর্ব ইওরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব সিন্ডিকেট দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তাদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। কোনো কর্মকর্তা তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করায় তারা।

সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবে পতিত সরকারের লোকজন এসব করাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ, এখনো শ্রমবাজারের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে হাসিনা সরকারের সময়কার সিন্ডিকেটগুলো।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রোমানিয়ায় অসাধু আদম বেপারী সিন্ডিকেট অত্যন্ত সক্রিয়। তাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার তোপের মুখে পড়েছেন রোমানিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ও শার্জ দি অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ মহসীন মিয়া। তাকে অপসারণ করতে সিন্ডিকেটগুলো গত ৫ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করিয়েছে এবং সাত দিনের মধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার এবং অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। মহসীন মিয়াকে প্রত্যাহার না করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানবন্ধনকারীরা।

এ ব্যাপারে মহসীন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। মূল কারণ, অসাধু আদম বেপারী সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের কথামতো কাজ না করলেই বিভিন্ন সমস্যা। যেসব কর্মকর্তা অসাধু আদম বেপারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, তাদের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অপবাদ, অভিযোগ দেয়া হয়, মানববন্ধন করানো হয়। মূলত ওই কর্মকর্তাকে চাপে রাখার জন্য এটা করা হয়, যেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মকর্তারা তাদের কথা শুনতে বাধ্য হন।
এদিকে রোমানিয়ায় বসবাসকারী ‘বাংলাদেশি সংগঠন’-এর মুখপাত্র খান ফিরোজ এক প্রতিবাদলিপিতে জানান, মহসীন মিয়ার কাজে বিভিন্ন ভুয়া কম্পানির মালিকদের স্বার্থ নষ্ট হয়েছে। ওইসব কম্পানি বাংলাদেশি শ্রমিকদের রোমানিয়ায় এনে বিপদে ফেলেছে। অনেককে অন্য দেশে পাচার করেছে। ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ করে দেয়ায় ভুয়া কম্পানির মালিকরা মহসীন মিয়ার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে রোমানিয়া শেনজেন এরিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দালালরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মহসীন মিয়ার কারণে অবৈধভাবে রোমানিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসা ধ্বংস হতে পারেÑ এমন আশঙ্কায় তারা রোমানিয়া থেকে মহসীন মিয়াকে সরানোর চেষ্টা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহসীন মিয়া নিয়মনীতির বাইরে কোনো কাজ করেন না। এ কারণে আদম বেপারী সিন্ডিকেটগুলোর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সিন্ডিকেটগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সরকারি অনেক কর্মকর্তা। তাদের সহযোগিতায় এর আগেও অনেক দেশের দূতাবাসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অপসারণ করিয়েছে সিন্ডিকেটগুলো।

অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর রোমানিয়ায় অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক গেছেন। সূত্র জানায়, এরই মধ্যে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে ওয়ার্ক পারমিট ইসু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এদিকে বেআইনিভাবে রোমানিয়ায় জনবল পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে রোমানিয়া দূতাবাস। পাশাপাশি দক্ষ জনবল পাঠানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস আহ্বান জানিয়েছে, রোমানিয়াকে যেন ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার না করেন বাংলাদেশিরা। এ ব্যাপারে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরপরই ব্যবসায় ধস নামে অসাধু আদম বেপারীদের। নড়েচড়ে বসে সিন্ডিকেট। তারা চেষ্টা করছেন, দূতাবাসের যেসব কর্মকর্তা কথা শুনছেন না, তাদের সরিয়ে দিতে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো দাপ্তরিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *