মোহাম্মদ আলী বোখারী
লাগাতার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেই চলেছেন। সর্বশেষ, গত ২১ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসি-তে আমেরিকান মুল্লুকের সব অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের এক সভায় ট্রাম্প ‘ভোটার টার্নআউট’ বা ভোটার উপস্থিতির জন্য ইনডিয়াকে ২১ মিলিয়ন ডলার ‘ইউএসএইড’ দেয়ার কথাটি তোলেন এবং একই সঙ্গে ব্যঙ্গ করে নিজেও ভোটার উপস্থিতি ঘটাতে চান। তাকে এ তথ্য দিয়েছেন সরকারি ব্যয়সংকোচন (ডিওজিই বা ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি) মন্ত্রী বা সেক্রেটারি ইলন মাস্ক।
যদিও এর আগে অর্থাৎ ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ডিওইজি’-এর ‘এক্স’ বা পূর্বতন টুইটার হ্যান্ডেলে ইউএসএইড তহবিল বরাদ্দের ক্ষেত্রে ১১টি দেশের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করলে সেসব দেশে কার্যক্রমটি বাতিল করা হয়। সেখানে ২৯ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে ‘স্ট্রেনথেনিং পলিটিকাল ল্যান্ডস্কাপ’ বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সুসংহত করতে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতেই ট্রাম্প বলেছেন, ‘[দে] গেট টুয়েন্টি নাইন (২৯) মিলিয়ন ডলার। দে গেট এ চেক। ক্যান ইউ ইম্যাজিন ইউ হ্যাভ এ লিটল ফার্ম, ইউ গেট টেন থাউজেন্ড হেয়ার, টেন থাউজেন্ড দেয়ার। অ্যান্ড দেন উই গেট টুয়েন্টি নাইন মিলিয়ন ডলার ফ্রম দি ইউনাইটেড স্ট্যাটস গভর্নমেন্ট। দে হ্যাড টু পিপল ওয়ার্কিং ইন দ্যাট ফার্ম। টু পিপল … আই থিঙ্ক দে আর ভেরি হ্যাপি। দে আর ভেরি রিচ। দে উইল বি অন দি কভার অফ এ ভেরি গুড বিজনেস ম্যাগাজিন প্রিটি সুন ফর বিয়িং গ্রেট স্ক্যামার্স।’ অর্থাৎ তারা ২৯ মিলিয়ন (বাংলাদেশি অর্থে ৩৫২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা) পেয়েছেন। যেন একটা চেক। ভাবতে পারেন, একটা ছোট প্রতিষ্ঠান; পেয়ে থাকে এখানে, সেখানে ১০ হাজার ডলার। এরপর আমেরিকা সরকার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার। মাত্র দুইজন লোক ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। মাত্র দুইজন… আমি মনে করি, তারা খুব সুখী। তারা খুব ধনী।
খুব শিগগিরই প্রতারক হিসেবে তারা কোনো বাণিজ্যিক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেবেন।
কিন্তু এই আমেরিকান অনুদান কী কেবলই নিছক অভিযোগ কিংবা রাজনীতি অথবা কূটনীতি? বাংলাদেশের ওই ছোট প্রতিষ্ঠানের দুইজনকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেয়া নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য অথবা তাদের প্রকৃত কৃতকর্ম উদ্ঘাটন করা না গেলেও ইনডিয়ায় ২১ মিলিয়ন ডলার (১৮২ কোটি) নিয়ে ইতোমধ্যে সর্বত্র হইচই পড়ে গেছে। কেননা, ট্রাম্প সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন, ‘টুয়েন্টি ওয়ান মিলিয়ন ডলার গোয়িং টু মাই ফ্রেন্ড প্রাইম মিনিস্টার মোদি ইন ইনডিয়া ফর ভোটার টার্নআউট। উই আর গিভিং টুয়েন্টি ওয়ান মিলিয়ন ডলার ফর ভোটার টার্নআউট, হোয়াট অ্যাবাউট আস? আই ওয়ান্ট ভোটার টার্নআউট টু, গভর্নরস।’ অর্থাৎ ২১ মিলিয়ন ডলার গেছে আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ইনডিয়ায় ভোটার উপস্থিতির জন্য। আমরা ভোটার উপস্থিতির জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছি, আমাদের কী কী হবে? গভর্নররা, আমিও ভোটার উপস্থিতি ঘটাতে চাই।
মজার বিষয় হচ্ছে, আগের দিন ডিওইজি’র ওই এক্স হ্যান্ডেলের বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় বিশদ আলোকপাত করা হলে পুরো ৪৮ ঘণ্টা ধরে মোদির দল বিজেপি বলে চলেছে – ‘ওই ২১ মিলিয়ন ডলার কংগ্রেস পেয়েছে। ইনডিয়া ও মোদি-বিরোধী চক্রান্তের জন্যই রাহুল গান্ধীর মাধ্যমে কংগ্রেস এই বিদেশি অনুদান পাচ্ছে।’ কিন্তু ট্রাম্প নাছোড় বান্ধা। সুনির্দিষ্টভাবে বলেই দিলেন- ‘আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদি…।’
কিন্তু রহস্য থেকেই গেল! কারণ, ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি- ‘এ ধরনের কোনো অনুদান প্রকল্প আমেরিকা সরকারের নেই।’ আর যেহেতু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুনিশ্চিত করেছেন, সেহেতু বিষয়টা কী নিয়মবহির্ভূত অনুদান হিসেবে দাঁড়াচ্ছে না? ইতোমধ্যে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মোদি কেন নীরব? ২০২১ থেকে এ পর্যন্ত ইউএসএইডের মোট ৬৫০ মিলিয়ন ডলার ইনডিয়ায় এসেছে।’ এর আগে ইনডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, এ বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক এবং এটির তদন্ত হওয়া চাই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কী বলবেন- ২৯ মিলিয়ন ডলার কোন দুই ব্যক্তির কাছে গেছে এবং তারা কবে বাংলাদেশে সেই টাকায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটি সুসংহত করেছেন?
মোহাম্মদ আলী বোখারী : লেখক, টরন্টো থেকে