Jaijaidin

বোরো আবাদে দৃষ্টি অন্তর্বর্তী সরকারের

Shah Alam Soulav
5 Min Read

আলতাব হোসেন

বাজারে আমন ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবার বোরো ধান চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোমর বেঁধে মাঠে কাজ করছেন তারা। চলছে জমিতে চারা রোপণ।

ধানের জন্য বিখ্যাত হাওড়াঞ্চলে এখন বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। কুয়াশার আবরণ কিংবা পৌষের হাড়কাঁপানো শীত কোনোটাই তাদের নিবৃত্ত করতে পারছে না। তবে আগাম বন্যা নিয়ে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বোরো উৎপাদন নিয়ে হাওড়াঞ্চলের সাধারণ কৃষকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেছে।

চালের আমদানিনির্ভরতা কমাতে চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে অন্তর্বর্তী সরকার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। বোরো আবাদে সেচকাজে বিদ্যুৎ, সার ও ডিজেল ব্যবস্থাপনায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সার ও ডিজেলের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। চোরাচালান, সার ও ডিজেলের ডিপোতে নাশকতা ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক থাকতে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেচকাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনে শহরে লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
হাওড়াঞ্চল নেত্রকোনা, জামালপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, মাগুরা, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো এবং ময়মনসিংহে প্রচণ্ড শীত ও হিমেল বাতাস উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আবু সামা বলেন, বোরো ধান রোপণ শেষ করেছি। এখন আমাদের দাবি, সরকার যেন রাত-দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখে। না হলে ঘনকুয়াশায় বোরো ধানের ক্ষেত নষ্ট হতে পারে।

সুনামগঞ্জের শনির হাওড়ের কৃষক আবু তাহের জানান, ক্ষেতের পানি নামতে দেরি হওয়ায় বিলম্বে ধান রোপণ করতে হবে। এখনো হাওড়ের বেড়িবাঁধগুলোর সংস্কারকাজ শেষ হয়নি। আমরা শংকার মধ্যে আছি, এবারও কি আগাম বন্যা আমাদের ফসল ভাসিয়ে নেবে?

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে দুই হাজার মেগাওয়াট। মৌসুমের শুরুতেই সার, বীজধান ও সেচ প্রয়োজন হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে বোরো আবাদে সেচের জন্য বিদ্যুতের পিক পিরিয়ড।

কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সামগ্রিক চাহিদা ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৫১টি এবং অপেক্ষমাণ আবেদন ২৩ হাজার ৮৭৩টি। শুধু সেচের জন্য চলতি জানুয়ারিতে ৩৪৭ মেগাওয়াট, ফেব্রুয়ারিতে ৮৬৫ মেগাওয়াট, মার্চে ১ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট, এপ্রিলে ১ হাজার ৯৮৯ মেগাওয়াট এবং মে মাসে ২ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা হবে।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের কোনো ঘাটতি নেই এবং চাহিদা অনুসারে সরবরাহ করা হবে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পিক আওয়ার পরিহার করে রাত ১১টার পর থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অফপিক-আওয়ারে সেচপাম্প ব্যবহারের বিষয়ে কৃষকদের মধ্যে প্রচারণা চালানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সেচ মৌসুমে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করা; সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ এবং মেরামত কাজ জরুরিভিত্তিতে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।

জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিতকরণ, সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন এবং মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার ও ডিজেলের ডিপোগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে বছরে দেশে ২৫ লাখ টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বোরো মৌসুমের জন্য প্রয়োজন হয় ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৯১ টন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে প্রয়োজন হয় ৩ লাখ ৯৬ হাজার টন। ফেব্রুয়ারিতে ৪ লাখ ১১ হাজার টন এবং মার্চে প্রয়োজন পড়বে ২ লাখ ২৩ হাজার টন ইউরিয়া সার। সরকার এরই মধ্যে বোরো মৌসুমের জন্য ১৫ লাখ টন সারের মজুদ করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ডিজেল ও সার পাচাররোধে বিজিবিসহ সীমান্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স। অন্তর্বর্তী সরকার বোরো উৎপাদনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থা একসঙ্গে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *