Jaijaidin

বোট ক্লাব থেকে বেনজীরকে বহিষ্কারের কারণ জানালেন নাসির মাহমুদ

Shah Alam Soulav
5 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্লাবটির সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের সদস্য পদও বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকা বোট ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে উড়ে এসে জুড়ে বসেন বলে জানিয়েছেন বর্তমান ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসির মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বোট ক্লাবের রিভারভিউ লাউঞ্জে ‘বিগত ক্লাব সভাপতি বেনজীর আহমেদের আর্থিক অনিয়ম’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান বর্তমান ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসির মাহমুদ।

সংবাদ সম্মেলনে বোট ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ জাস্টিস, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, সাবেক সচিব, সামরিক বাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তা, পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এই ক্লাবের সদস্য। বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা যাকে সভাপতি বানান, তিনি আসলেই সামাজিকভাবে অত্যন্ত স্বীকৃত ব্যক্তি। উনি (বেনজীর) বিনা ভোটে বোট ক্লাবের মতো বড় ক্লাবের সভাপতি হয়ে সামাজিক সম্মান গেইন করতে পারেন।

এটা তো হতেই পারে। তিনি (বেনজীর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই ডিগ্রি বাতিল করেছে। ডক্টরেট ডিগ্রি উনি কিনে কেন নিয়েছিলেন সামাজিক সম্মানের জন্য?’

বোট ক্লাব সভাপতি আরও বলেন, ‘এই ৩২ কোটি টাকা কতখানি সঠিক, বাড়বে না কমবে, এর জন্য আমরা দেশের স্বনামধন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম হুদাবাসিকে নতুন করে আবার নিয়োগ দিয়েছি। এটা নিশ্চিত থাকেন, ৩২ কোটি থেকে দু-চার কোটি টাকা কমতে পারে, এর খুব বেশি কমবে না। পারলে বাড়তে পারে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে উনি (বেনজীর) তিন বছর ক্লাবে আসতে দেননি। আমি বোট ক্লাবে এলে তার বাহিনী দিয়ে তিনি অনেক কিছুই করতে পারতেন। আমি ভয়ে আসিনি। তার অনেক ক্ষমতা ছিল, আমি শুধু একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে ফাইট দেওয়ার মতো অবস্থান আমার ছিল না। তবে আমি হাল ছাড়িনি, আইনি লড়াই করে গেছি। আমি তিনবার তার (বেনজীর) নামে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি।

তিনি যখন অন্য আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বললেন, তখন তিনি বুঝলেন আমার আইনি লড়াইটা লিগ্যাল। আমি যদি কোর্টে যাই তৎকালীন কমিটি ও তাকে সভাপতি পদ থেকে সরে যেতে হবে। তখন তিনি নিরুপায় হয়ে আমার সঙ্গে মিটিংয়ে বসতে চেয়েছেন। ক্লাবের এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে তিনি আমাকে বাদ দিতে পারেন না। বাদ দেওয়ার অধিকার তার ছিল না। আমি তাকে ভয় পেয়েছিলাম। এখন তাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

পরীমনি-কাণ্ডের সঙ্গে বেনজীরের কোনো সম্পর্ক ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির মাহমুদ বলেন, ‘পরীমনি-কাণ্ডের পরে আমি তিন বছর বোট ক্লাবে আসতে পারিনি। আমি যেভাবে হেনস্তা হয়েছি, সেভাবে হেনস্তা হওয়ার কথা ছিল না। পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য নন। তিনি কারো গেস্ট হয়ে ক্লাবে এসেছিলেন। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো সদস্যকে গেস্ট আনতে হয়, সে জন্য অনুমতি লাগে। তার (পরীমনির) কোনো অনুমতি ছিল না। আমি প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তার (পরীমনির) উচ্ছৃঙ্খলতা আমি মানতে পারিনি।’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বোট ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকার চাপে প্রেসিডেন্ট পদটি একজনের (বেনজীর) জন্য আমরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে অন্যান্য ক্লাবের মতো নির্বাচন দেওয়াসহ নানা নিয়মের বিষয়ে কোনো ধার ধারেননি সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ। উনি শুধু সময়ক্ষেপণ করেছেন। একই সঙ্গে আমাদের ক্লাব যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত, তাই নানা নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে জন্য প্রতিবছর কিছু ডকুমেন্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সাবমিট করতে হয়, সেখান থেকেও ডকুমেন্ট আসে, উনি এসবের কিছুই করেননি।

ফলে আমাদের ক্লাবের অস্তিত্ব দিন দিন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত হয়ে আমরা এলাম, সব ডকুমেন্ট আমরা নিয়েছি। তবে বাস্তবতা হলো উনি পালিয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন হয়েছে তা নয়, উনি থাকতেই কিন্তু নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনাকে একাধিকবার নোটিশ দিই সংবিধান মতে প্রতিবছর নির্বাচন দেওয়ার জন্য। গত ২৪ জুন উনাকে উল্লেখ করে নোটিশ দিই যে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি চরম ক্ষমতায় থাকার মধ্যে নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হয়েছেন।’

বোট ক্লাব প্রেসিডেন্ট জানান, সাবেক ক্লাব প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ক্লাব সেক্রেটারি লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের আর্থিক অনিয়মজনিত বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার কারণে গতকাল ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডের প্রথম নির্বাচিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিগত ক্লাব প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ এবং লে. কমান্ডার (অব.) তাহসিন আমিনের সদস্য পদ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. নকিব সরকার অপু, মো. জেসমুল হুদা মেহেদী অপু, আসমা আজিজ, এ কে এম আইয়াজ আলী (খোকন), আলীম আল কাজী (তুহিন), খালেদা আক্তার জাহান, মির্জা অনিক ইসলাম, আজাদ এম এ রহমান, মো. জাকির হোসাইন, খন্দকার হাসান কবিরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *