গাফফার খান চৌধুরী
দেশে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ইনডিয়ার স্থল সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ৩০টি জেলা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে এসব জেলায় সাধারণত অবস্থান নেন অপরাধীরা এবং সুযোগ বুঝে সীমান্ত পথে পালিয়ে যান। এজন্য এ জেলাগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সীমান্তবর্তী ৩২টি জেলাকে। এগুলো ইনডিয়া ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী। ইনডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত আছে। আর মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত আছে রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার সঙ্গে ইনডিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশেরই সীমান্ত আছে। সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সীমান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনটি জেলাও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে তা ইনডিয়ার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের ৩০টি জেলার মতো নয়।
সূত্র বলছে, অপারেশন ডেভিল হান্টে ইনডিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার, খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট, রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর পর পতিত সরকারের দোসর ও সহযোগীরা সীমান্ত দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তারা অনেক আগ থেকেই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন। তারা সুযোগ বুঝে সীমান্ত পারি দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য এই ৩০টি জেলার উপর সবচেয়ে বেশি গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। কোনো কোনো জায়গায় ড্রোন দিয়েও নজরদারি করা হচ্ছে।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অপারেশন ডেভিল হান্টে সব ধরনের অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফলে সব অপরাধীই চরম আতঙ্কে রয়েছে এবং তারা দেশত্যাগে তৎপর।
সূত্রটি বলছে, দেশের তিনটি বিমানবন্দর দিয়ে অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বর্তমানে তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা সীমান্ত। এজন্য অপরাধীরা নানা ছদ্মবেশে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আত্মগোপনে থাকতে পাওে, যাতে সুযোগ বুঝে সীমান্ত পারি দেয়া যায়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অনেক অপরাধী বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করারও চেষ্টা করে যাচ্ছে চক্রগুলো, যাতে ওইসব পাসপোর্ট দিয়ে অনায়াসে সীমান্ত দিয়ে বৈধভাবে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের অধীন জাতীয় পরিচয়পত্র শাখাকে অবহিত করা হয়েছে। নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের সকল পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিসকে এ সংক্রান্ত সরকারি বার্তা দেয়া হয়েছে, যাতে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সঠিক কি না তা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সকল মোবাইল ফোন অপারেটরকে বৈধভাবে সিমকার্ড বিক্রি করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। কোনোভাবেই বেনামি সিমকার্ড বিক্রি করা যাবে না। বেনামি সিমকার্ড বিক্রির সঙ্গে জড়িতদেরও চলমান অপরাশেন ডেভিল হান্টে আইনের আওতায় আনা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন), ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও সকল বাহিনীর সাইবার বিভাগকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ২৪ ঘণ্টা মনিটর করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি কমলাপুর রেলস্টেশনে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইনডিয়ার ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। ইনডিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনের টিকিট নিয়ম মেনে বিক্রির বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো কোনো সময় সুনির্দিষ্ট তথ্যের সূত্র ধরে ট্রেনে অভিযানও চালানো হচ্ছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, চোরাচালানপ্রবণ স্থল সীমান্তে টহল ও বাড়তি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যৌথ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘন ঘন অপারেশন পরিচালনা করছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সকল জেলাই গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। কারণ এসব জেলায় অনেক সময়ই অপরাধীরা আত্মগোপন করে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা সীমান্ত দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। এজন্য জেলাগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অপারেশন চালানোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।