যাযাদি ডেস্ক
লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে নেয় নাই। গণঅভ্যুত্থানের শেষে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে। তা ঠিক বলে মনে করি না। এই সংবিধানের অধীনের সরকারকে বৈধ মনে করি না। আমি জনগণের পক্ষে কথা বলি। এ সরকারে পক্ষে সবসময় থাকার প্রশ্নই আসে না। সকল প্রকার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।’
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে ইমাজিনেক্সট ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘জাতীয় সংস্কৃতি: প্রেক্ষিতে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিকে ‘দেশের নতুন গঠনতন্ত্র’ উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সংবিধান মানে আইন। ইংরেজ আইন প্রণয়ন করে, জনগণ গঠনতন্ত্র করে; সংবিধান মানেই হচ্ছে উপনিবেশিক শাসন। আপনি লুটের মাফিয়া শ্রেণির পক্ষে, আপনি একটা শাসনতন্ত্র বানাবেন। একটা আইন দিয়ে গরিবদেরকে শোষণ করবেন। সাধারণ মানুষকে শোষণ করবেন। আগের মতোই চলবেন। আর গঠনতন্ত্র মানে জনগণ নিজেরা অংশগ্রহণ করে।’
জাতীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতিবাদকে ফেরত নিয়ে আসা হয় বলে মন্তব্য কর তিনি বলেন, ‘জাতিবাদের একটি রূপ হচ্ছে বাঙালি জাতিবাদ, যার ইতিহাস হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সাংস্কৃতিকভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধীতাই আমাদের সংস্কৃতির মূল চরিত্র। সকল প্রকার জাতিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’ এটা বাঙালি জাতিবাদের পাশাপাশি সব প্রকার ধর্মীয় জাতিবাদের বিরুদ্ধেও অবস্থান বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামে জাতিবাদের স্থান নেই’।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের মাধ্যমে উৎসবের নজির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেখিয়েছে। যাতে বাঙালি ছাড়াও ছোট ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেছ। এই উৎসবে ধর্মনিরপেক্ষ, ধার্মিক, আস্তিক, নাস্তিক, সনাতন ধর্মালম্বী, বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এবং সকলে অংশগ্রহণ করেছে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে গোষ্ঠীটি তৈরি হয় তাকে জাতি বলা হয়। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী।’
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার সংস্কৃতি যত শক্তিশালী হোক, আমাকে কিন্তু সেখানে বাইরের পৃথিবীর সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকতে হবে। আকর্ষণ তৈরি করতে হবে। সেই জায়গা তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘অনির্বাচিত সরকার’ না বলার দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারের সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। জনসম্মতিহীন অবৈধ সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলা হয়। যেমন— এক/এগারোর সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকার অবৈধ বা জনসম্মতিহীন সরকার না। এটা ঠিক (বর্তমান) সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি।’
অতীতে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোটে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রাজনৈতিক দলগুলো এসেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রতি ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের সমর্থন রয়েছে। তাই এ সরকারকে কেন অনির্বাচিত? অনির্বাচিত সরকার তো বীনা সিক্রি (বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার) বলে বেড়ান। ভারতের সেনাবাহিনী বলে— আমরা নির্বাচিত সরকার আসলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবো।’
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা হবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তুষার বলেন, ‘আপনি বলছেন— ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হলে দেশে বিশৃঙ্খলা হবে। ধরা যাক সরকার নির্বাচনটা মার্চে নিয়ে গেলো। এখন যদি ডিসেম্বরের পরে বিশৃঙ্খলা হয়, তার দায় কার? যারা এ কথা বলেছেন অবশ্যই তাদের নিতে হবে।’
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের সভাপতিত্বে ও ইমাজিনেসক্সট ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় ‘ধারণাপত্র’ পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাফর ফিরোজ। এছাড়া আরও বক্তব্য দেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।