Jaijaidin

বাংলাদেশের অপর নাম জিয়াউর রহমান

Shah Alam Soulav
6 Min Read

মো: মামুন রানা

দেশ চায় স্বাধীনতা, জাতী চায় মুক্তি
আমি মেজর জিয়া বলছি —

১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উপর গনহত্যা শুরু করেছিল, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে তখনকার নেতা যখন পাক আর্মির কাছে আত্তসমর্পন করেছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে ডব জবাড়ষঃ বলে বিদ্রোহ করে এক কন্ঠ।

অত:পর ২৭ শে মার্চ, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বাংলার রাখাল রাজা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকনাম ছিল কমল।

১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি তারিখে বগুড়া জেলার, নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের মন্ডল বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জনাব মনসুর রহমান এবং জাহানারা খাতুন দম্পতির পাচ সন্তানের মধ্যে কমল ছিলেন ২য় সন্তান৷ জনাব মনসুর রহমান কলকাতা শহরের সরকারি দপ্তরে রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বগুড়ার বাগবাড়ি গ্রামে শৈশব শুরু হলেও কিছুকাল তার কলকাতায় অতিবাহিত হয়৷ কলকাতার হেয়ার স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়৷ ভারতবর্ষ বিভাগের পরে করাচীর করাচি একাডেমি থেকে ১৯৫২ সালে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন৷ তারপর ১৯৫৩ সালে তিনি করাচির ডি যে কলেজে ভর্তি হন এবং একই বছর কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট রুপে যোগদান করেন।

২৭ শে মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সময়, মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন এবং ২৮ শে মার্চেও বেশ কয়েকবার, মেজর জিয়াউর রহমান কে চৎড়ারংরড়হধষ ঐবধফ ড়ভ ইধহমষধফবংয এবং খরনবৎধঃরড়হ অৎসু ঈযরবভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মার্কিন গোপন নথিতে উল্লেখ আছে৷

মহান স্বাধীনতা ঘোষণার পরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মেজর জিয়া ও তার বাহিনী সামনের সারি থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তারা চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। ১৭ ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রথমে তিনি ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি সেনা – ছাত্র- জনতা এবং যুবকদের সংগঠিত করে ১ম, ৩য় ও ৮ম ইস্ট বেংগল রেজিমেন্ট, এই তিনটি ব্যাটিলিয়নের সমন্নয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র বিগ্রেড জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি ব্যারাকে ফিরে যান এবং ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৪ তম বিগ্রেডের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান এবং একই বছর কর্নেল পদে নিয়োগ সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিপ অফ স্টাফ ( উপ সেনা প্রধান) পদে নিয়োগ লাভ করেন৷

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তুমুল জনপ্রিয় অফিসার হিসেবে ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক ১৫ আগষ্টের পটপরিবর্তন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এক দু:শাসনের অবসান হয় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তুমুল জনপ্রিয় অফিসার হিসেবে ২৪ আগষ্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেইন অফ কমান্ড প্রতিষ্ঠার পেছনে বেশি জোড় দেন।
কিন্তু কিছু কুচক্রি সেনা অফিসার কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃতাধীন ৪৬ বিগ্রেডের সহায়তায় ৩ রা মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান এবং ততকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান কে ক্যান্টনমেন্টের বাস ভবনে গৃহবন্দি করে রাখেন৷

কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা – মুক্তিসংগ্রামে জরিয়ে আছে যার নাম, বাংলাদেশের ইতিহাসের রাখাল রাজা জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে রাখে এমন সাধ্য কার।

১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহি এবং জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয়৷ ঐ বিপ্লবে সেনাবাহিনীর সিপাহিদের শ্লোগান ছিল –
সিপাহি জনতা ভাই ভাই
অফিসারদের রক্ত চাই,
সিপাহি জনতা ভাই ভাই
সুবেদারের উপরে অফিসার নাই।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেংগে পরা চেইন অফ কমান্ড আবার প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান।

ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার বিপ্লবের পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হন এবং বাংলাদেশের শাসনভার তুলে নেন জিয়াউর রহমান। অত:পর সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হন জিয়াউর রহমান।

তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মতবাদ প্রতিষ্টিত করেন এবং জাতীকে একটা সঠিক পরিচয় প্রদান করেন।

বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে খাল কাটা কর্মসুচী সহ দেশ বিনির্মানে প্রচুর কাজ শুরু করেন, অল্প কিছুদিনেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার হাত ধরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, রাজনীতি সবার জন্য উন্মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রাখেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি ইরাক – ইরান যুদ্ধ বন্ধে বিশেষ ভুমিকা রেখে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রসংসিত হন।

সারা বিশ্বের মুসলমানদের সংগঠন ওআইসি পূনর্গঠনে ভুমিকা রাখেন এবং দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে সব দেশকে এক করে সার্ক গঠন করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিন এশিয়া হয়ে তিনি সারা পৃথিবীতে বহুল প্রসংসিত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পরিচয় লাভ করেন।
বাংলাদেশের অত অর্জন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমানের সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফলে ১৯৮১ সালে চট্রগ্রামে শহীদ হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে প্রতিটি ক্রাইসিস মুহুর্তে দেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তাই বাংলাদেশের অপর নাম, জিয়াউর রহমান।
লেখক: সাবেক ছাত্রদল নেতা।

 

Share This Article
1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *