লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
বিএনপির যুগ্ন-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, এ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকার নিরপেক্ষ একটা দায়িত্বে আছে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশার জায়গা বেশি। এজন্য বারবার বলি যে, হাসিনার বিচারটা কিন্তু জরুরী। ফ্যাসিবাদের বিচার যদি না হয়, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে তার পরিবার সম্পূর্ণরুপে জড়িত। দুর্নীতি বলেন, দুঃশাসন বলেন, অত্যাচার বলেন, নির্যাতন, গুম, খুন- সবকিছুর সাথে তারা জড়িত। হাসিনার নির্দেশ ছাড়া পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া এই জিনিসগুলো হয় নাই। এটার সঙ্গে যারা দোসর, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, গডফাদার, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড সব জায়গায় ছিল। মন্ত্রণালয়েও ছিল। পাশাপাশি শাসন ব্যবস্থায় কিছু কর্তা ব্যক্তিও ছিল। সবার বিচারটা দৃশ্যমান হতে হবে।
শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে জুলাই আগস্ট বিপ্লবে আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার আয়োজনে শহরের টাউন হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বক্তব্যে এ্যানি বলেন, আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে বারবার বলছি যে, এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। এখনো সময় আছে, বিশেষ করে এ দুই-চার দিন যেভাবে কথাবার্তা পক্ষে-বিপক্ষে আসতেছে, এটা জাতির জন্য খুব ক্ষতিকারক। এ ধরনের আলোচনা থেকে বের হয়ে আসতে হলে একটা ইফতারের দাওয়াত দিয়ে সকল রাজনৈতিক দলকে একই মঞ্চে বসান। একটা দাওয়াতে বসান। একটা গোলটেবিলে বসান। বসিয়ে বৃহত্তর যে স্বার্থটা আমাদের সে বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনেক কিছু ত্যাগ করেন। ছোটখাটো মতবিরোধ উপেক্ষা করে যেটা প্রয়োজন সেটাকে সংস্কার করে একটা আলোচনার টেবিলে এসে যদি সেখানে একটা সুন্দর সিদ্ধান্ত আসে, সেখানে জাতি খুশি হতে পারে। না হলে এ জাতি কিন্তু কাউকে ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ যে পথে গেছে, কেউ যদি ওই ধরনের চিন্তা করে, তাহলে ক্ষতিটা কিন্তু সবার হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখনো একটা কান্তিকাল পার করতেছি। হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার পর আমরা যে খুব স্বাধীন হয়ে গেছি, দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি- বলছি, প্রকৃতপক্ষে এখনো স্বাধীন হতে পারি নাই। গভীর ষড়যন্ত্র চলতেছে। কারণ গণতন্ত্রের ভীত যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে আমরা জনগণ কিন্তু নিরাপদ না। যতজনে যত কথা বলছে। দেশে একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার নির্বাচন হবে। সেজন্য আমরা আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি। সর্বশেষ জুলাই যে আন্দোলন হয়েছে- আমাদের ছাত্র ভাইয়েরা, বৈষম্য বিরোধী বা মেধার জন্য যে আন্দোলন তৈরি করছে, সব একত্রিত হয়ে দেশের মধ্যে একটা বড় ধরনের আন্দোলন হয়েছে, শেষ পর্যন্ত হাসিনা পালিয়ে গেছে। ১৫ বছর, সর্বশেষ যে জুলাইয়ের আন্দোলন- সবার চাওয়া পাওয়া কিন্তু একই। আমরা একটু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ চেয়েছি, যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ খুব সুন্দর হবে। আমাদের কোন টেনশন থাকবে না, আমাদের স্বাধীন থাকবো। এটাই আমাদের চাওয়া পাওয়া ছিল। কিন্তু এখন রাজতিক মাঠে এসে একেক রাজনৈতিক দল বা একেক ব্যক্তি একেক রকম কথা বলছে।
সামান্য মতবিরোধ থেকে বৃহত্তর কোন গ্যাপ তৈরি হয়ে যায়, ক্ষতি কিন্তু সবার হবে। দেশবাসীর হবে, সুতরাং সবার সতর্ক হওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে এ্যানি বলেন, শুধু হঠাৎ করে বলে ফেললাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, তাহলে কি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যায়? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে। সে প্রক্রিয়াটা বিচারিক প্রক্রিয়া হতে পারে, আইনি প্রক্রিয়া হতে পারে। সবার আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটা যৌথ সিদ্ধান্তে হতে পারে। এখন আমি বিচার করলাম না, আমি আইনি প্রক্রিয়া গেলাম না। কিন্তু হঠাৎ আমি বলে দিলাম ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’, আসলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে খুব একটা লাভ জাতি পাবে বলে আমরা মনে করি না। আমি মনে করি না।
ড্যাবের জেলা সভাপতি ডা: নাজমুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: পারভেজ রেজা কাকন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম হুমায়ুন, ড্যাবের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: আবদুল করিম মিঠু, সাবেক সভাপতি ডা: রাকিবুল হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা: শহিদুল হক, ডা: খালেদ হোসেন ইকবাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহতদের মধ্যে ২৫ জনকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়।