Jaijaidin

পল্লীবিদ্যুতে অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা

Shah Alam Soulav
4 Min Read

গাফফার খান চৌধুরী

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতির পরও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের ১৪ হাজার মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার। আরইবি সরকারের কথা না রাখায় বড় ধরনের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বঞ্চিতদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে পল্লীবিদ্যুৎ খাতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভুক্তভোগী মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জারদের অনেকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সব প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক জনবলকে নিয়মিত করার ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় অনিয়মিত এবং চুক্তিভিত্তিক জনবলকে নিয়মিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনকি অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে তা কার্যকরও হয়েছে। কিন্তু পল্লীবিদ্যুতের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি।

আরইবি ও পবিস সূত্রে জানা যায়, আরইবিতে (পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড) বিভিন্ন সময় সাবেক একজন ইডি ও বর্তমান পরিচালকসহ তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিত করা হয়েছে। নিয়মিত করা এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকল্পের জন্য অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে আরইবিতে কর্মরত অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চলছে। অথচ পবিসের ৩৬ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জারদের নিয়মিত করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঢাকা, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ভুক্তভোগীরা জানান, ২০ থেকে ৩৬ বছর ধরে মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করলেও তাদের নিয়মিত করা হয়নি। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সূচনালগ্ন থেকে ৪৭ বছর ধরেই সাংগঠনিক কাঠামোতে মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার পদটি বিদ্যমান।

তারা আরো জানান, গত বছর ৫ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সব চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীকে নিয়মিত করার ঘোষণা দেন। ১৪ জুলাই চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করার জন্য আরইবি ও পবিসের একটি যৌথ কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের নিয়মিত করার মতামত দেন। আরইবি গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জারদের নিয়োগ পদ্ধতি ও একই রকম চুক্তির ফরম্যাট অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া চুক্তিভিত্তিক লাইনম্যান এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দৈনিক মজুরিভিত্তিক বিলিং সহকারীদের নিয়মিত করে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অজ্ঞাত কারণে তাদের নিয়মিত করা হচ্ছে না। ভৌগোলিক কারণে তাদের পাহাড়, হাওড় ও চর এলাকায় কাজ করতে হয়। এতে তাদের পরিশ্রম অনেক বেশি হয়। পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। প্রতি মাসে গ্রাহক বাড়ছে এক থেকে দেড় লাখ। গ্রাহক অনুপাতে সারা দেশে প্রায় ১৮ হাজার মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার থাকার কথা। সেখানে আছে প্রায় ১৪ হাজার। ৪ হাজার জনের বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

তারা বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে শনাক্তকরণ, নাইট ও ডে অপারেশন, মিটার চেকিং, গ্রাহক মোটিভেশন, দাপ্তরিক চিঠিপত্র ও বিজ্ঞপ্তি বিতরণ, অফিস ডিউটি এবং দুর্যোগ মুহূর্তে লাইন সচল করার কাজসহ পল্লীবিদ্যুতের নানা ধরনের কাজ করতে হয় তাদের। অথচ তাদেরই নিয়মিত করা হয়নি। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ১০ হাজার জনবল বয়সজনিত কারণে অবসরে যাবেন। মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার নিয়মিত করলে প্রিপেইড মিটার স্থাপনসহ নানা কাজে গ্রাহক বাড়তি সুবিধা পাবেন।

তাদের বক্তব্য, একসময় পল্লীবিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল শতকরা ৩০ ভাগ। চার মাসের বিল বকেয়া ছিল। বর্তমানে মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জারদের তৎপরতার কারণে সিস্টেম লস সিঙ্গল ডিজিটে নেমে এসেছে। আর বকেয়া রয়েছে মাত্র এক মাসের। যাদের কারণে পল্লীবিদ্যুতের এতটা উন্নতি হয়েছে, তাদের প্রতি বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না। আরইবি যদি অন্য বিতরণ সংস্থার সঙ্গে তুলনা করতে চায় তাহলে আরইবি ও পবিসের সব জনবল চুক্তিভিত্তিক করুক। পবিসের সাংগঠনিক কাঠামোতে ২৮টি পদের মধ্যে মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার ছাড়া বাকি ২৭টি পদের জনবল নিয়মিত।

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অন্যান্য পদে কর্মরতদের নিয়মিত করার কারণে স্বাভাবিক কারণেই মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাই তাদেরও নিয়মিত করা উচিত। সম্প্রতি যাদের নিয়মিত করা হয়েছে তাদের জন্য পবিসের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও মিটার রিডার-কাম-মেসেঞ্জার নিয়মিত করলে পবিসের উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না। যদিও বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়াউল আজিমসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *