Jaijaidin

নারী হেনস্থা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি: রিজভী

Shah Alam Soulav
4 Min Read

বিশেষ প্রতিনিধি

সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও হেনস্থার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে নারীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, ঠিক তেমনি অনলাইনেও তাঁরা বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রী, নারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার নারীদের ইভটিজিং, শ্লীলতাহানী এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নারীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। একের পর এক নারীকে হেনস্থা ও আক্রমণ এবং সামগ্রিক বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে কেন আজ নারীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং এর পেছনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা, সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। এই অসভ্যতা ও সহিংসতার পেছনে কোনো উগ্রগোষ্ঠীর উস্কানি বা মদদ থাকতে পারে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে এবং যাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অতি রক্ষণশীল রাষ্ট্র বানানো, যেন নারীরা নিজ দেশে অধিকারহীন হয়ে পড়েন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপির প্রতিশ্রুতি

রিজভী বলেন, আজকের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা যখন নারীর ক্ষমতায়ন নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলছি, তখন আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তবতা অত্যন্ত হতাশাজনক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও অত্যাচারের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এবং নারীদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, যা আমাদের জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ। এই কঠিন বাস্তবতায় বিএনপি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নারীদের নিরাপত্তা মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশেই নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশে এখনও নারীরা নানা ধরণের বৈষম্য, সহিংসতা এবং শোষণের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন এবং তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিএনপি সরকার দূঢ়ভাবে অঙ্গিকারবদ্ধ যে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের উন্নয়ন এবং তাঁদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে একটি নারীবান্ধব, নিরাপদ ও স্বাধীন সমাজ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সমান অধিকার সুরক্ষা ও মর্যাদা ভোগ করবেন। নারীর ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা এবং তাঁদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য বিএনপি সরকার শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা, ক্ষমতা ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে দিবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে নারীরা সম্মানিত, সুরক্ষিত এবং সমর্থিত হয়ে এগিয়ে যাবেন এবং তাদের অধিকার মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করব। ইনশাল্লাহ আমরা এক নতুন যুগের সূচনা করব, যেখানে নারীরা নিজেদের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটিয়ে সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রেও নারীরা যে, অগ্রগামিতা দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীরা ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন অগ্রণী ভূমিকার অধিকারী। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের দুর্বার আন্দোলনে বিএনপি এবং সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নারী নেতাকর্মী-সমর্থকদের ছিল অনন্য-অদম্য ভূমিকা।

রিজভী আরো বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশের নারীরা সকল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। তাঁদের শক্তি, সাহস এবং অবদান দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আর নারীদের সেই ক্ষমতায়নের রাজনৈতিক পাথেয় হিসেবে সবসময় পাশে থাকবে বিএনপি।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *