সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
লোকশিল্প একটি সমাজের বা সম্প্রদায়ের জীবনের মূল ধারার সংস্কৃতি এবং জীবন চিত্রকে প্রতিফলিত করে। কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়াই শুধুমাত্র বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত জ্ঞানের মাধ্যমে লোকায়ত মানুষ লোকশিল্পকে ধারণ করে আসছে।
বাংলার লোক ও কারুশিল্পের বহু নিদর্শন হারিয়ে গেলেও অনেক জাত-শিল্পী ও দক্ষ কারিগর পূর্ব পুরুষের চর্চা বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে এমন সংগ্রামী কারুশিল্পীদের নিয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব।
এমনই একজন। নকশি হাতপাখার গুনী শিল্পী বাসন্তী রানী সূত্রধর। স্টলে বসেই নকশিপাখা তৈরি করছেন তিনি। মনের সবটুকু রং দিয়ে রঙিন সুতোর প্রতিটি ফোঁড় তুলে আনছেন হাত সমৃদ্ধ অতিতের কথা। নকশিপাখা বলতে, সূচিকর্ম করা পাখা। পাখার মাঝখানটায় আকর্ষণীয় সূচিকর্ম। বিশেষ করে উজ্জ্বল রঙের সুতোয় ফুটিয়ে তোলা লোক মোটিভ তার হাতপাখাকে ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করে। মাঝে মাঝে সুতার বুননে নিখুঁতভাবে পাখার বুকে ফুটে ওঠে প্রিয়জনের নামের অক্ষর। নাম ছাড়াও পাখায় পংক্তি লেখার প্রচলন রয়েছে।
বাসন্তী রানী সুত্রধর পাখা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন সুতো বাঁশ ও কাপড়। বাঁশের গোলাকার চাকতিতে সুই সুতো দিয়ে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশাও করতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন পাখা। হাতে নিয়ে ঘুরালে সুন্দর বাতাসও হয়।
সোনারগাঁয়ের সূচিশিল্পী জানান, তিনি বংশ পরম্পরায় নানী, দাদী ও মায়ের কাজ দেখে দেখে এই শিল্প শিখেছিলেন। ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি বর্তমানে এটি তার পেশা বলে জানান শিল্পী।
নকশি পাখা আকারে আর নকশায় বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আর আকারে হয় বড়, ছোট আর মাঝারি। সাধারণত ৪০ ইঞ্চি ব্যাস হলো পাখার সাধারণ মাপ। আর মাঝারি ও ছোট পাখা বানানো হয় ছোট শিশুদের কথা চিন্তা করে। সব থেকে ছোট পাখাটা আকারে একটা পয়সার সমান।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার বলেন, লোকজ মেলার আয়োজন মূলত প্রবীন ও নবীনদের মাঝে সংস্কৃতির মেলবন্ধন তৈরি করা এবং সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা শিল্পীদের একই সুতায় গেঁথে নেওয়া সহ নানা আয়োজনে শিল্পীদের উজ্জীবিত করা।