বিশেষ প্রতিনিধি
খুব দ্রুত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, আমি আশা করছি নির্বাচনটা হবে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দিবেন। ড. ইউনুস বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর না হলেও জুনের মধ্যে হবে। এই কথাটাই আমাদেরকে একটা বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, একবার বললেন ডিসেম্বর, এরপরে আবার বললেন জুনের কথা। ড. ইউনুস ভোট ডিসেম্বরে বলার পরপরই, অন্য আরেকজন বলে দিলো ভোট জুনে হবে। পরে আপনি (ড. ইউনূস) তাকে ইন্ট্রোডিউস করলেন। এই বিষয়টাকে সন্দেহ করার মতো যথেষ্ট যুক্তি আছে। এই নির্বাচনটা যেন না হয়। আমার মনে হচ্ছে, সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি ওনারা করবেন না। নির্বাচন দ্রুত দেওয়ার কোনও লক্ষণ আমি দেখি না।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকটা দল বলা শুরু করেছে এইটা না হলে নির্বাচন হবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন হবে না। যদি এগুলো বলতে থাকে তাহলে নির্বাচন কেমনে হবে! কেউ কেউ আবার বলেই ফেলেছেন যে, আমরা নির্বাচনে যাবো না। কয়েকদিন আগে হলে আপনারা নির্বাচনে গেলেই কি আর না গেলেই কি! আপনাদেরকে বাংলাদেশে কে চিনতো! এখন ধমক দেন আপনারা নির্বাচনে যাবেন না। এগুলো করে কোনো লাভ নেই। নির্বাচনটা যথাসময়ে হবে, এটা আমরা আশা করতে পারি। খুব দ্রুত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, আমি আশা করছি নির্বাচনটা হবে।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের যে নির্বাচন ব্যবস্থা এটা কিন্তু ধসে পড়া। এই নির্বাচন ব্যবস্থাকে ড. ইউনুস ঠিক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না। যদিও এখন কিন্তু নির্বাচন নিয়ে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে।
ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে শফিউর রহমান নামের একজন লোক নিয়োগ হয়েছে। এ তো আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট। আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট কিন্তু আপনার (ড.ইউনুস) ডানে বামে আছে। আপনি একটু ওদের কাছ থেকে সাবধানে থাইকেন। সচিবালয়ের চারজন সচিব, এর বাইরে আরেকজন সচিব মর্যাদায় রয়েছে, এই মোট পাঁচজন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে সঠিক রাস্তায় চলতে দিবে না। আপনার সারা জীবনের অর্জন কিন্তু এরা শেষ করে দিবে। আপনি দয়া করে এদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। আমরা আপনার সম্মান রক্ষা করে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই। আপনি সফল হলে দেশটা ভালো হবে। আপনার সফলতা আমরা চাই। আপনার সফলতার উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাদের দেশটা এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের দেশের জনগণের, জাতির, দলের প্রত্যেকটা মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করা যায়, এদেশকে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মত-বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু, যে দলই হোক, বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য সকল দলকে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশী জনগণের একটাই শক্তি রয়েছে, সেটা হলো ঐক্য। সেটা আমরা জুলাই-আগস্টে প্রমাণ করেছি। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এদেশকে থেকে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। আমাদের বিপরীত শক্তি আমাদেরকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ার একটিভিস্টদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এদের কাজ হলো দেশের মধ্যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে রাখা। এদের থেকে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। জাতির বিবেক এখনো অন্ধ হয়ে যায়নি। দু’একজন লোকের কথায় সব শেষ হয়ে যায়নি। শেষ হয়ে যাবে না।
তিনি বলেন, আমার সম্পর্কে বেশ কিছু কথা ব্লগাররা লিখতেছে। তাদের আজেবাজে লেখা দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। এরপর দেখলাম শুধু আমি না, তারা আমাদের ইশরাক, মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং শেষ পর্যন্ত তারেক রহমানকে নিয়েও বলছে। তারা কিন্তু, অন্য কোনো জুনিয়র নেতাদের নিয়ে কিছু বলছে না। শুধুমাত্র বিএনপির মধ্যে যাদেরকে মানুষ পছন্দ করে, এদের বিরুদ্ধে লিখতেছে কয়েকটা লোক। আমি মনে করি এরা দেশ ও জাতির শত্রু।
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।