Jaijaidin

দৈনিক যায়যায়দিন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান

Shah Alam Soulav
4 Min Read

যাযাদি ডেস্ক

১৮ বছর পর (২০০৭-২০২৫) দৈনিক যায়যায়দিন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান। আজ ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে শফিক রেহমানকে দৈনিক যায়যায়দিন-এর ডিক্ল্যারেশন দেওয়া হয়।

এ খবর নিয়ে শফিক রেহমান তেজগাঁয়ের লাভ রোডে যায়যায়দিন মিডিয়াপ্লেক্সে এলে সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাকে অভিনন্দন জানায়।

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক শফিক রেহমানের সম্পাদিত যায়যায়দিন ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রধাণত এ কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধানের চাপে যায়যায়দিন পত্রিকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন শফিক রেহমান।

তিনি যায়যায়দিন কারো কাছে কখনো বিক্রি করেননি। সে সময় তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগও করেননি। এ কারণে শফিক রেহমানের অনুপস্থিতিতে পত্রিকাটিতে সম্পাদক হিসেবে কারো নাম যায়নি।

তদানীন্তন সেনাপ্রধানের অসন্তোষ এবং অভিপ্রায়ের কারণে এপৃল ২০০৮-এ শফিক রেহমানকে সম্পাদক পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়।

শফিক রেহমান সে সময় সেনা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে কোনো আপোষ করেননি। আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদের সঙ্গেও শফিক রেহমান কোনো আপোষ করেননি।

সেই সময়ও তাকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন ছেড়ে লন্ডনে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

ওয়ান ইলেভেনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানান রকম তথ্য পাঠিয়ে পত্রিকায় ছাপানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হতো।

শফিক রেহমান সম্পাদক থাকাকালে তাদের সরবরাহকৃত সোর্সবিহীন সেসব তথ্য ছাপতে অপারগতা প্রকাশ করতেন। তিনি কখনো রাজি হননি গোয়েন্দা সংস্থার সাপ্লাই করা সিডি-র বিবরণ বা দুর্নীতিবাজদের লিস্ট ছাপতে। বরং শফিক রেহমান সে সময় সেনাপ্রধানের আলুপ্রীতি এবং ক্ষমতা দখলের অভিলাষ সম্পর্কে তার পত্রিকায় ‘নেড়িকুকুরের কা-’ শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে লিখিত কলামে এর সমালোচনা এবং তির্যক মন্তব্য প্রকাশ করেছিলেন।

এ কলামে তিনি লিখেছিলেন দুই নেত্রী মাইনাস থেকে প্লাস হবেন এবং তিন উদ্দিনই (মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, ইয়াজউদ্দিন) মাইনাস হয়ে যাবেন।

সেনাপ্রধানের চাপে শফিক রেহমানের যায়যায়দিন ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ২০০৮ সালের আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছিল।

শফিক রেহমান কেন যায়যায়দিন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন সেটি বিবিসির সাবেক সাংবাদিক এবং তৎকালীন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আতাউস সামাদ সে সময় বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকদের এক মিটিংয়ে উল্লেখ করেছিলেন।

যায়যায়দিনের সম্পাদনা ও প্রকাশনা ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন হয়নি। অর্থাৎ যায়যায়দিনের জমি, ভবন, এর সমস্ত সম্পদ এবং যায়যায়দিনের মতো একটি প্রভাবশালী পত্রিকার নামের টাইটেল বাবদ একটি টাকাও নেননি শফিক রেহমান।

এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কর্তৃক ২০১২ সালে আনীত একটি সুয়োমোটো মামলার শুনানিতে। এর বিবরণ সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সহযোগিতায় এইচআরসি গ্রুপ যায়যায়দিন জবরদখল করে রেখেছিল।

এখানে উল্লেখ্য, ২০২৪-এর জুলাই গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নেন। ২৪-এর ছাত্রখুনী হিসেবে তার বিরদ্ধে থানায় মামলা চলমান আছে।

অর্থ পাচার ও কর ফাকির দায়ে এইচআরসি গ্রুপের কর্ণধার সাইদ হোসেন চৌধুরীকে ২০০৮ সালে দুই বার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির জন্য অন্যতম অভিযুক্ত সাইদ হোসেন চৌধুরী। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছিল।

২০০৪ সালে বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় এইচআরসি গ্রুপের জাহাজ কোম্পানির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল।

ওয়ান ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অসৎ উপায়ে ব্যাংকের শেয়ার কেড়ে নেন সাইদ হোসেন চৌধুরী।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপীর অভিযোগে ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ এবং ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ থেকে অপসারণ করেছে সাইদ হোসেন চৌধুরীকে। এছাড়া আদালত থেকে সাইদ হোসেন চৌধুরীকে সস্ত্রীক বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে ২০১৬ সালে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রায় ছয় মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী তালেয়া রেহমানের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে শফিক রেহমান লন্ডন যান।

জয় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০২৩ সালে শফিক রেহমানকে সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়।

এই মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার শফিক রেহমানকে এই মামলার দ- এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে এবং স্থায়ী জামিন দিয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *