যাযাদিপ্র রিপোর্ট
দেশে চারটি প্রদেশ এবং ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে ইনডিয়ার রাজধানী নয়াদিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট, অর্থাৎ রাজধানী মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। অন্যদিকে বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই দুই সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার প্রতিবেদনে সারাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ এবং কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে আলাদা বিভাগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গ্রেটার সিটি ঢাকা ক্যাপিটাল সিটি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর করতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা এক বছরের মধ্যে শেষ করা, ডিসিদের পদবি পরিবর্তন করার মতো আরো কিছু সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া ইমিগ্রেশনের জন্য পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। পাবলিক সার্ভিস পৃথক করে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বর্তমানে মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও ৬১টি বিভাগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোকে যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে সংস্কার কমিশন সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে মোট ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগে পুনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়গুলোকে পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। যেমনÑ বিধিবদ্ধ প্রশাসন; অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য; ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগ; কৃষি ও পরিবেশ এবং মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন।
এদিকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিচার বিভাগ কোনো দিনও স্বাধীন ছিল না, তাই কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন করার প্রস্তাব দিয়েছে। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়, পুলিশি তদন্ত অনেক সময় রাজনৈতিক হয়ে থাকে, এ জন্য এটা দরকার। এই কমিশনের প্রতিবেদনটি ৩৫২ পৃষ্ঠার বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি আরো জানান, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চগুলো ডিভিশনে সেটআপ করার জন্য বলেছেন তারা। কারণ, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের হাই কোর্ট যেখানে ছিল, এখনো সেখানেই রয়েছে। এ জন্য হাই কোর্টের বেঞ্চগুলো বাড়িয়ে ডিভিশনে নেয়ার কথা বলেছে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো উপজেলা পর্যন্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কোর্টের ভেতর আইনজীবীরা যে পলিটিক্স করেন, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা দেয়া হচ্ছে।
কোনো দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শনে প্রেসিডেন্ট বা নির্বাহী বিভাগের যে এখতিয়ার রয়েছে, সেটা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এ জন্য একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও সেই বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে ক্ষমা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা সুপারিশে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়টি কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন।
কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ করে প্রায়োরিটি বেসিসে কিছু প্রস্তাবকে একত্র করা হবে, যেখানে সব পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে, সেটার নাম হবে জুলাই চার্টার। এই জুলাই চার্টারের কতটুকু বাস্তবায়ন করতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো, এর ওপর নির্ভর করছে নির্বাচন।