যাযাদিপ্র ডেস্ক
সরকারের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোর তরফে অর্থের যোগান বেশি থাকায় ট্রেজারি বিল-বন্ডে সুদহার আরও কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে বিল ও বন্ডে সুদহার কমেছে ১০৭ থেকে ১৮১ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।
ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে বিল ও বন্ডে সুদহার কমেছিল ১০ থেকে ২৯ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।
ট্রেজারি বিল এক ধরনের স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার থেকে জারি করা হয়। মেয়াদ হয় ৯১ থেকে ৩৬৪ দিন পর্যন্ত।
ট্রেজারি বিল নিরাপদ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবেও পরিচিত। কারণ এর ওপর সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
ট্রেজারি বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র। এটাও সরকার জারি করে। মেয়াদ হয় ২ বছর থেকে ২০ বছর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৭ ফেব্রুয়ারির নিলামে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর সবশেষ ১৭ জানুয়ারির নিলামে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ।
সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে সুদহার কমেছে ১০৭ বেসিস পয়েন্ট।
১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮০ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। তার এক মাস আগে ছিল ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ। সে হিসাবে সুদহার কমেছে ১১৮ বেসিস পয়েন্ট।
ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৪ দিনের টেজারি বিলের সুদের হার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সুদহার কমেছে ১৬০ বেসিস পয়েন্ট।
ফেব্রুয়ারিতে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদ হার ছিল ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ; জানুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে সুদহার কমেছে ১৬৩ বেসিস পয়েন্ট।
১০ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। গেল মাসে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সে হিসাবে সুদহার কমেছে ১৮১ শতাংশ পয়েন্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারিতে ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের নিলাম হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির যে কয়েক দিন বাকি আছে, সেখানে ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ হারও কমবে।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দর বাড়তে থাকে। তখন অনেক ব্যাংকার বলেন, বেশি সুদ ও শতভাগ নিরাপত্তা থাকায় ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও এ বিষয়ে কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, “ট্রেজারি বিল-বন্ডে সুদের হার কমছে। ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করে শুয়ে শুয়ে মুনাফা করেছে। তবে এ সুযোগ সামনে ব্যাংকগুলো পাবে না। আমানত বিনিয়োগ করেই ব্যবসা করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার কমে যাওয়ার কারণ হল সরকারের চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমেছে। ডিসেম্বর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে কোভিড মহামারীর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ট্রেজারি বিল-বন্ডে সুদ তুলনামূলক বেশি। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ খাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ করেছে।
“তাতে চাহিদার তুলনায় অর্থের যোগান বেশি হয়েছে। এর প্রভাবে তারল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকারও দর কমিয়ে দিয়েছে।”