Jaijaidin

টেলিযোগাযোগ খাতের সবাইকে সতর্ক করলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ

Shah Alam Soulav
5 Min Read

যাযাদিপ্র ডেস্ক

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। মান উন্নয়ন না করলে এই খাতে কেউ টিকতে পারবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে স্টারলিংক আসছে। নিজেদের সুরক্ষায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের সেভাবেই ব্যবসা করতে হবে। কাউকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। লেয়ার চেঞ্জের নামে ব্যবসা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হবেনা।

রোববার (৯ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘প্রান্তিক পর্যায়ে দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মুস্তাফা মাহমুদ হোসাইন।

ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সবগুলো লেয়ারকে বলছি, ডাটা প্রাইস কমাতে হবে। সবাইকে সমন্বিত ভাবে রিফর্ম করতে হবে। ৫ এমবিপিএস-কে আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রডব্যান্ড বলি না। আমি মনে করি ২০ এমবিপিএসের ওপরে গতি থাকলে সেটিই ব্রডব্যান্ড।

সবার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা যার যার জায়গা থেকে কোয়ালিটি নিশ্চিত করবেন। স্টারলিংক এর বিপরীতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিজেদেরকেই নিজের সুরক্ষা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে সবার সেবার মান বাড়াতে হবে।

মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে বলেন, এমএনওদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এগুলো তাদেরকে মেনে নিতে হবে। সেভাবেই সেবার মান উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

এনটিটিএনদের উদ্দেশ্যে ফয়েজ বলেন, এনটিটিএনগুলোকে ব্যান্ডউইথ নয় ফাইবার ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করতে হবে।  একইসঙ্গে সারকারি প্রতিষ্ঠান বিসিসি, পিজিসিবি, বিটিসিএল সহ যাদের কাছেই ফাইবার পড়ে আছে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আইআইজি-দের ব্যান্ডউইথ মিটরিং করা হবে।

অনুষ্ঠানে আইএসপিএবি’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, আমরা যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছি, আমরাই আন ফেয়ার ফেয়ার মার্কেট কম্পিটিশনের মুখোমুখি হচ্ছি৷ দুই বছর আগেই সম্পূর্ণ আইএসপি লাইসেন্সকে ঢেলে সাজানো হলো, ৪ টি লেয়ার করা হলো। এখন আমরা আবার শুনতে পাচ্ছি লাইসেন্স রিভিউ করার চেষ্টা করছে। আমরা মাত্র ২ বছর আগে লাইসেন্স পেয়ে আমরা যে বিনিয়োগটা করেছি প্রান্তিক পর্যায়ে কেউ বাবার জমি বিক্রি করে, কেউ বউয়ের গয়না বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছে। এমনটি হলে ছোট উদ্যোক্তারা পথে বসবেন। তাই সরকারকে আমাদের বিনিয়োগের সুরক্ষা দিতে হবে। এই সেক্টরে যাতে যখন তখন পলিসি চেঞ্জ করা না হয় সেই অনুরোধ রইলো।

বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, দেশে ইন্টারনেটের দাম কমাতে সবচেয়ে বড় বাঁধা এখনো কর। ১০০ টাকার ডাটায় কর হিসাবে ৬০ টাকা যায় সরকারের পকেটে। ফলে সরকার দাম কমাতে না চাইলে, কর না কমালে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবেনা। প্রায় ৬ মাস হয়ে গেলেও এখনো এনটিটিএন এর মনোপলিতে এখনো হাত দিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।

মূল প্রবন্ধে সুপারিশে বলা হয়, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সেবা খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের গতি হতে হবে সর্বনিম্ন ২০ এমবিপিএস। কোয়ালিটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করতে হবে। ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। ডাটার কোন মেয়াদ থাকবে না। ইন্টারনেট যে কোন অজুহাতে বাজে কোন কারনে সরকার বন্ধ করবে না এই ঘোষণা অথবা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, অবৈধ আইএসপি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে মোবাইল অপারেটরদের আইএসপি ব্যবসা থেকে বিরত রাখতে হবে। ওভারহেড ফাইবার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। ব্যান্ডউইথ ও এনটিটিএন এর দাম নির্ধারণ না করে বাজার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দিতে হবে। ইন্টারনেট এর ওপর কর কমিয়ে আনতে হবে। সহজ লভ্য হ্যান্ডসেট গ্রাহকদেরকে কিস্তির মাধ্যমে অপারেটরদেরকে বিক্রয়ের জন্য বাধ্য করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল অপারেটর যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায় আসে তাহলে আইএসপির ব্যবসা থাকবেনা।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন, আইআইজির সভাপতি আমিনুল হাকিম, বিডি জবস এর সিইও ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবি’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) হেলাল উদ্দিন, বেসিস এর অ্যাসোসিয়েট কমিটির সভাপতি রাফেল কবির, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসির, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিনিয়র ডাইরেক্টর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত প্রমুখ।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *