Jaijaidin

জলবায়ুর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বৈরী আবহাওয়া

Shah Alam Soulav
5 Min Read

আলতাব হোসেন

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বৈরী হয়ে উঠছে পৃথিবীর আবহাওয়া। এতে বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী। পৃথিবীর একপ্রান্তে চলছে ভয়াবহ দাবানল, তুষারপাত। আবার অন্য প্রান্তে হাড়কাঁপানো শীত, ঘনকুয়াশা ও বৃষ্টি। একই সঙ্গে বন্যায় ভাসছে অনেক দেশ। গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ, বাড়ছে সাগরের পানির উচ্চতা। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেকে হারাচ্ছেন বাসস্থান, সম্পদ ও প্রিয়জন। ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের।
নতুন বছরের শুরুতেই দাবানলে ছারখার আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল। অন্যদিকে সাধারণত উষ্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত নিউ মেক্সিকো, জর্জিয়া ও টেক্সাসসহ দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয় চলছে তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত। আবার দক্ষিণ ও মধ্যপশ্চিমে বিরাজ করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহাওয়া।

এদিকে তীব্রশীতের কবলে এশিয়া ও ইউরোপ। জাপানে দৈনিক তুষারপাতের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ মিটার। উত্তর ইংল্যান্ডে রাতের তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার পূর্বাভাস রয়েছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) বছরের প্রথম দিনই বিশ্ব আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছিল, পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারে ২০২৫ সাল। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্যারিস চুক্তির সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এবার সেই সীমা ভাঙার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুগের (১৮৫০-১৯০০) আগের তাপমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি গরম পড়বে এবার। দাবানলে পুড়বে আমেরিকাসহ ইউরোপের অনেক দেশ। ডাব্লিউএমওর এই পূর্বাভাসের সত্যতা মিলেছে বছরের শুরুতেই।
এদিকে মরুভূমির দেশ সউদি অ্যারাবিয়ার বিভিন্ন শহরে ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ও বন্যা। এতে অনেক জায়গায় গাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দেশটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরো ভারি বৃষ্টি, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও ধূলিঝড় হতে পারে। এ অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সউদির বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। এ ছাড়া দেশটির উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা কমে যাওয়াসহ তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সউদিতে চলমান শৈত্য প্রবাহের মধ্যে মক্কা, মদিনা এবং জেদ্দায় সোমবার থেকে থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মদিনার বদর আল-শাফিয়াহ অঞ্চলে। বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক বন্যায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে গত মঙ্গলবার জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দাবানলে জ্বলছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস। আমেরিকার অঙ্গরাজ্যটির ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে লাখো ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি। লেলিহান আগুন থেকে বাঁচতে গিয়ে যানজট, প্রকট ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসাসহ নানা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়েছেন। দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

জানুয়ারি মাসে সাধারণত শীত ও বর্ষাকাল থাকে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাই দাবানলপ্রবণ এলাকা হলেও বছরের এ সময় তেমন দুর্যোগের রেকর্ড নেই। কিন্তু এবারের দাবানল ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের।
গত বছর এ সময়ের চিত্র ছিল উল্টো। তখন শীতের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পানিতে ডুবে ছিল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া। সেই পানি নিষ্কাশনে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়াবাসীকে। অর্থাৎ ৩৬৫ দিন আগেও যে শহর থেকে বৃষ্টির পানি সরাতে যুদ্ধ করতে হয়েছিল, সেই শহরেই পর্যাপ্ত পানির অভাবে দাবানলের আগুন নেভাতে নাস্তানাবুদ দমকল বাহিনীর সদস্যরা। অথচ আমেরিকার দাবানলের মৌসুম শেষ হয় অক্টোবরে।

শীতের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশের ঢাকা ও ইনডিয়ার দিল্লিতে ঘনকুয়াশার কারণে বাড়ছে বিলম্বিত ফ্লাইটের সংখ্যা, বিঘ্নিত হচ্ছে রেল-নৌ পরিষেবা। পাকিস্তানের লাহোর ও পাঞ্জাবের কয়েকটি এলাকায় তীব্রশীতের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। শীতকালীন ঝড় ও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ার শঙ্কায় আছে আমেরিকাও।

ইনডিয়ার উল্টর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা ৬ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকে শীত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উত্তর ভারতে কুয়াশার কারণে অর্ধশতাধিক ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল বিভাগ।
শীতের তাণ্ডব চলছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া ও পেশোয়ারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পাকিস্তান অবজারভার বলেছে, চলতি সপ্তাহে দেশটিতে বাতাসের আর্দ্রতা ৯৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। লাহোরে তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে। একদিকে কুয়াশা আরেকদিকে স্মগ (স্মগ ও ফগ মানে ধোঁয়া ও কুয়াশা) অ্যাফেক্টের কারণে ডিসেম্বর থেকে এ অঞ্চলের বায়ুমান নিয়ে উদ্বেগে আছেন স্থানীয়রা।

এদিকে কানাডা ও আমেরিকার দিকে ধেয়ে আসছে এই দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ শীতকালীন ঝড়। শুক্রবার স্যাটেলাইটের ছবি প্রকাশ করে আমেরিকার আবহাওয়া দফতর জানায়, মিড ওয়েস্ট অঞ্চল থেকে আসা ঘূর্ণি বাতাসের কারণে সেন্ট্রাল প্লাইন ও মিড অ্যাটলান্টিক এলাকাজুড়ে ভারি তুষারপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে পড়তে পারেন কয়েক লাখ মানুষ। আবহাওয়া দফতর আরো জানায়, আগামী সপ্তাহে ভারি তুষারপাত ও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়তে যাচ্ছেন ৪০টি অঙ্গরাজ্যের অন্তত ২৫ কোটি বাসিন্দা।

বাংলাদেশেরও ৯ জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানীতে সকাল থেকে ক্রমশ সূর্যের তেজ বাড়লেও রাতে ফের শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত ও পথে আশ্রিত মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তবে ঢাকা শীত-গরমে মিলেমিশে থাকলেও গ্রামের মানুষ শীতে জবুথবু অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *