Jaijaidin

ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়নি আরেফিন সিদ্দিককে, আজিমপুরে দাফন

Shah Alam Soulav
4 Min Read

যাযাদিপ্র ডেস্ক

আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের।

তবে জানাজা কিংবা ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানানোর জন্য তাকে নেওয়া হয়নি ৪০ বছরের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

এক সপ্তাহ রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মারা যান।

এরপর রাতেই তার মরদেহ নর্থ রোডের (ভূতের গলি) বাসায় নেওয়া হয়। লাশ রাখা ফ্রিজিং ভ্যানে।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বাসার পাশের বায়তুল আকসা জামে মসজিদের সামনে তার জানাজা হয়।

জানাজায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানও অংশগ্রহণ করেন।

সেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে না।

“তবে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বিশেষ দোয়া হবে।”

লাশ কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হল না, এমন প্রশ্ন সাংবাদিকরা করলেও উপাচার্য কোনো উত্তর দেননি।

বায়তুল আকসা থেকে শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ীদের শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ দিতে আরেফিন সিদ্দিকের লাশ নেওয়া হয় ধানমন্ডি ৬-এর শাহী ঈদগাহে।

জুম্মার নামাজের পর ঈদগাহ জামে মসজিদেও তার জানাজা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ঈদগাহ মাঠেও আরেকবার জানাজা হয় তার।

সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহকর্মী, শিক্ষার্থী, পরিবারের সদস্যসহ বন্ধু ও স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টায় তার দুই ভাই আতিকুল্লাহ সিদ্দিক ও সাইফুল্লাহ সিদ্দিক হাসপাতালে জড়ো হওয়া সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর জানান।

ঢাকা ক্লাবে ইফতার কিনতে গিয়ে গত ৬ মার্চ পড়ে যান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি।

পাশেই বারডেম হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তার ‘বড় ধরনের স্ট্রোক’ করার কথা বলেন। তাকে নেওয়া হয় ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের আইসিইউতে। অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকলে সেদিনই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখানেই এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা চলছিল তার। তবে অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক প্রথম দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি।

এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচনের পর ২০১৩ সালের ২৫ অগাস্ট প্যানেলে থাকা তিনজনের মধ্যে আরেফিন সিদ্দিককে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয় সরকার।

উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার আগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের নেতা আরেফিন সিদ্দিক দুই মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রেস ইনস্টিটিউটের সদস্যও ছিলেন তিনি।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রচার বিষয়ক বেশ কিছু জাতীয় কমিটিতেও ছিলেন তিনি।

১৯৫৩ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকায় জন্ম নেওয়া আরেফিন সিদ্দিক ১৯৬৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

১৯৭৩ সালে বিএ এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এমএ করেন তিনি।

১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগ দেওয়ার আগে বুয়েটের পিআর ছিলেন আরেফিন সিদ্দিক।

মৃত্যুকালে আরেফিন সিদ্দিক স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাবার অসুস্থতার খবরে গত রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *