কয়রা খুলনা প্রতিনিধি
গত কয়েকটি অর্থবছরে খুলনার কয়রা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সংস্কারকাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও শেষ হয়নি কাজ। আবার এরমধ্যে কয়েকটি সড়কের অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
অপরদিকে কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় ধুলাবালুর এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চলমান এসব সড়ক সংস্কারকাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি)।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখায় বৃষ্টি হলে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কে ইটের টুকরা ফেলে রাখায় উঁচু-নিচু সড়ক ও ধুলাবালুতে ভোগান্তিতে পড়ছেন মানুষ।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ নম্বর কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের মে মাসে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখনো সেই কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কে বিছিয়ে রাখা ইটের খোয়াগুলো যানবাহনের চাকার আঘাতে গুঁড়া হয়ে লালচে ধুলায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরা।
কয়রা সদর থেকে ৪ নম্বর কয়রার দিকে যেতে সড়কটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর। ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া উপজেলার আরও ২১টি সড়কের সংস্কারকাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় ধুলাবালুর এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। উপজেলার দেয়াড়া গোপালের মোড় থেকে হোগলা অভিমুখী প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষে সড়কের কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীং বলছেন, এসব কাজ হয়েছে নিম্নমানের।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান এই ২৩টি সড়কে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পিচঢালাই হবে। গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চলছে এর দুটি সড়কের কাজ। এর মধ্যে একটি কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের আগস্টে, অপরটি শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প, গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্প এবং পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন সময়ে উপজেলার ৩৭টি সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারদের কাছে এগুলোর কার্যাদেশও দেওয়া হয়। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ১৬টি সড়কের। বাকি ২১টি সড়কের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সংস্কারকাজ মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেছে।
সড়কগুলোর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং এলজিইডির তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী স্থানীয়রা। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, সড়ক, বেড়িবাঁধসহ সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ ঠিক সময়ে শেষ না হওয়া যেন নিয়ম হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হলেও উপকূলীয় জনপদ কয়রার ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারসহ ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও টেকসই কাজ, ৬৫ কিলোমিটার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের কোনোটিই শেষ হয়নি। ঠিকাদারদের গাফিলতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্নীতিই এর জন্য দায়ী।
সড়ক সংস্কার কাজগুলোর ঠিকাদাররা জানান, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা ধীরগতিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন তারা। পাশাপাশি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা ও সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি এবং কাজের বিল ছাড়ের সময় কমিশন আদায় করেন। কোনো ঠিকাদার কাজ পেলে প্রাক্কলিত মূল্যের পাঁচ শতাংশ অফিস খরচ বাবদ এবং দুই শতাংশ ইউএনও অফিস বাবদ দিতে হয়। এসব কারণে অনেক সময় কাজের মন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন দীর্ষদিন কয়রা উপজেলা কর্মরত আছেন। বিগত দিনে সরকারি দলের স্থানীয় কিছু নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে যোগসাজশে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন কাজ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যা এখনো তিনি অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে গোপনে কতিপয় ঠিকাদারের সাথে মিলে ঠিকাদারী কাজের অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, সড়কগুলোর কাজ যথাসময়ে শেষ করতে ঠিকাদারদের একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনেক ঠিকাদার কাজ শেষ করতে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায়ের বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি করে তিনি কোন ঠিকাদার বলেছেন জানতে চেয়ে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদার কাছে একাধিকবার এ বিষয়ে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সুচতর এই উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কমিশন আদায়সহ ঠিকাদারদের রয়েছে নানা অভিযোগ। এখন এসব অপকর্ম ঢাকতে তিনি কয়রা থেকে তড়িঘড়ি করে অন্য উপজেলাতে বদলির চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম সরদার বলেন, এ বিষয় আমার তেমন জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। উপজেলা কর্মকর্তাদের কমিশন নেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ঠিকাদারদের সুবিধা না দিতে পারতে তো তারা অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক।