Jaijaidin

একজন মানুষ গড়ার কারিগরের প্রয়াণ

Shah Alam Soulav
3 Min Read

যাযাদিপ্র ডেস্ক

জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় একজন শিক্ষককে। শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান একজন শিক্ষক। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই নয়, বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা প্রদান করেন শিক্ষক। তেমনই একজন শিক্ষক ছিলেন ছিদ্দিক উল্লাহ কবীর। যিনি তার সারাটা জীবন দিয়ে গেছেন শিক্ষার আলো ছাড়ানোর ব্রতে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এই সৎ, পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান, কর্তব্যপরায়ন মানুষটি তাঁর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন নিজ বাড়িতে।

এই মানুষটি তার সারাটা জীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন গোটা লক্ষ্মীপুর জেলায়। ইংরেজীর জাহাজ বলা হয় তাঁকে। শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন নিজ জেলার অনেক বিদ্যালয়গুলোতে। লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বিদ্যালয় গড়ে তোলার পেছনে তার অবদান অপরিসীম। তার হাত ধরেই অনেক শিক্ষার্থী দেশের বড় বড় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সাদামাটা জীবন কাটিয়েছেন। তাঁর ছিলো না কোন অহংকার, ছিলো না কোন উচ্চবিলাসিতা।

এই মহান শিক্ষকের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২২ জানুয়ারি, লক্ষ্মীপুর জেলার আটিয়াতলী গ্রামের কবির বাড়িতে। লক্ষ্মীপুর জেলার এবং দেশের স্বনামধন্য এইচ এ সামাদ একাডেমি (বর্তমানে আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে এসএসসি পাশ করে টাঙ্গাইল করোটিয়া কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তবে ৬ মাস পর তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি লক্ষ্মীপুর চলে যান এবং ষাটের দশকের মাঝামঝি মাত্র একুশ বছর বয়সেই সামাদ একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ঢাকা নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর তাঁর বাবা মারা গেলে তিনি পুনরায় লক্ষ্মীপুরে ফিরে গিয়ে সামাদ একাডেমিতে যোগদান করেন। শুরু হয় তাঁর শিক্ষকতা জীবনের দীর্ঘ পথচলা। লক্ষ্মীপুর জেলার লাহারকান্দি, রসুলগঞ্জ, কলেজিয়েটসহ আরো বহু নামকরা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিনি। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতেও শিক্ষকতা করেন এবং নিজ হাতে অনেক বিদ্যালয়ের ভীত তৈরী করেছিলেন। অবশেষে ২০০৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন তিনি।

তাঁর লেখা ইংরেজী পাঠ্যবই ”CREATIVE ENGLISH”। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে বইটি অনেক পরিচিতি পায়। প্রচলন আছে, কেন্দ্রে তিনি যেন পরীক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব না পান সে উদ্দেশ্যে ছাত্ররা মসজিদের দান বাক্সে পয়সা দিত। কারণ তিনি দায়িত্বে থাকলে আর কারো ম্যাজিস্ট্রসি করতে হত না। এমন শিক্ষক এখনকার সময়ে খুবই বিরল।

মৃত্যুকালে তিনি তাঁর স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৬ মেয়ে রেখে যান। প্রকৃত মানুষ হিসেবে তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে শিক্ষা প্রশাসনে, ২য় ছেলে কলেজ (বাংলা) অধ্যাপক এবং ছয় মেয়েই শিক্ষকতা করেন।

তিনি তাঁর এ জীবনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে অনেক সম্মাননা পুরুষ্কার পেয়েছেন। তিনি তাঁর জীবনের পুরোটা সময়ই কাটিয়ে দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলায় শিক্ষার আলো ছাড়ানোর প্রয়াসে। পৃথিবী থেকে এমন সাদা মনের মানুষ চলে যাওয়া মানে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারানো।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *