যাযাদিপ্র ডেস্ক
স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের কারও সম্পত্তিতে আর কোনো হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদদের কারও সম্পত্তিতে আর কোনো হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ’
অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরিভাবে ফেরাতে সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো অজুহাতেই কোনো নাগরিকের ওপর আর যেন আক্রমণ না করা হয়। ’
বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীদের ক্ষোভের কারণ সরকার উপলব্ধি করতে পারে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘তাদের ও তাদের স্বজনদের বছরের পর বছর হাসিনার নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। ’
আইনশৃঙ্খলার অবনতি বিশ্বকে ভুল বার্তা দেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন বাংলাদেশের সমর্থকদের এমন কোনো আচরণ করা উচিত হবে না যা বর্তমানের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময়কার তুলনা করার সুযোগ করে দেয়, তা সেই তুলনা যতই অন্যায্য হোক না কেন। ’
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ষষ্ঠ মাস পূর্ণ হয়েছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)। আন্দোলনকারীদের ভাষ্যে, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা জুলাইজুড়ে হত্যার জন্য পতনের আগেও কোনো আফসোস করেননি। এমনকি ভারতে আশ্রয়ে থাকাকালে তার যেসব বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার পাচ্ছে, তাতেও কোনো অনুশোচনাবোধ প্রকাশ পাচ্ছে না।
উপরন্তু তার সরকারের নির্দেশে তৎকালীন পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে মারার শত শত ফুটেজ অনলাইনে প্রকাশ পেলেও হাসিনা বক্তব্য-বিবৃতিতে দম্ভ ও তাচ্ছিল্যভরে আন্দোলনকারীদেরই দুষছেন।
অনুশোচনার বদলে তার এ ধরনের দম্ভ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে ছাত্র-জনতাকে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আগে থেকে প্রচারণা চালিয়ে তিনি যেন সেই ক্ষোভের আগুন উসকে দেন।
ভাষণের ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ার পর আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। তাদের অভিযোগ, ভারতে বসে ভাষণ দিয়ে শেখ হাসিনা বিদ্বেষের আগুন ছড়াচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে তারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে মার্চ করার ঘোষণা দেয়।
সন্ধ্যার পর থেকেই সেখানে সমবেত হতে থাকে ছাত্র-জনতা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ৯টায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের সময় নির্ধারিত ছিল। যদিও হাসিনার অডিও ভাষণ প্রচার হয়। তার এ ভাষণকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে এক্সকেভেটর ও ভেকু মেশিন নিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম।
এছাড়া বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি-ঘর ও শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হয়। পরে আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রস্তুত। কোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
সেই বিবৃতির পর শুক্রবার দুপুরে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তৃতীয় বিবৃতি দিল অন্তর্বর্তী সরকার।