চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
রমজানে চট্টগ্রামে আমদানি পণ্যের গরমে পুড়ত ক্রেতারা। এটা এক দু‘বছরের বিষয় নয়, এক দশকের বিষয়। এবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। আমদানি পণ্যের চেয়েও দেশে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের গরমে পুড়ছে এবার চট্টগ্রামের ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানের চাঁদ রাত থেকে চট্টগ্রামের বাজারে প্রতিকেজি বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রয় হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এমনকি কোন কোন বিক্রেতা ৮০ টাকা দামেও বিক্রয় করছে প্রতিকেজি বেগুন। এছাড়া ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বেড়েছে সালাদ পণ্য লেবু, খিরা, শশা, ধনে পাতার দামও। এর মধ্যে ১৫ টাকার নিচে কোনো লেবুই পাওয়া যাচ্ছে না। বড় সাইজের একটি লেবু কিনতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত।
সোমবার (৩ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগরীর সবকটি হাটবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এ সময় ক্রেতারা বলেন, গত দশ বছর ধরে রমজানে ছোলা-চিনি, ডাল ও তেলে হাত দিতে পারেনি সাধারণ ক্রেতারা। সেই সাথে বাড়ত দেশে উৎপাদিত নিত্যপণ্যের দামও। এ নিয়ে উৎকন্ঠায় থাকতে হতো ক্রেতাদের।
এবার সেই আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও নিত্যপণ্য বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়া, পেপেসহ বিভিন্ন সবজি দামের গরমে পুড়ছে। দেশে উৎপাদিত এসব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের হোলিখেলা চলছেই।
তবে বিক্রেতাদের দাবি, রমজানে বেগুনসহ সবধরণের সবজি ও সালাদ পণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকারি আড়তেই দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে সালাদ পণ্য।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজিরদেউড়ি কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, চাঁদ রাতের আগের দিনের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। বাজারে এখন প্রতিকেজি আলু ৩০-৪০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা, বাধাকপি ৩০-৪০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেড়স ১০০-১২০ টাকা, শিমের বিচি ১০০-১২০ টাকা, কচুর ছড়া ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মূলা ৩০-৪০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, চিচিঙা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এরপরও গত বছরের রমজানের সময়ের তুলনায় এবার সবজির দাম কম বলছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছর রমজানে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ১৫০-২০০ টাকায়। বেগুন বিক্রি হয়েছিল ১৫০-২০০ টাকায়, আলু বিক্রয় হয়েছিল কেজিপ্রতি ১০০ টাকারও বেশি দামে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজারে সবজি কিনতে আসা মো. সানাউল্লাহ বলেন, রমজান এলে বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্রের দাম কমে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো সবজির মৌসুম হওয়ার পরও শুধু রমজান শুরু হওয়ায় এখন বাজারে সবজির দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত দু‘দিনের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে।
তবে গত বছর রমজানের তুলনায় এবার সবজির দাম এখনো পর্যন্ত কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। আবার কখন কি হয় বলা যাচ্ছে না, এর চেয়ে দাম আরও বাড়বে কি না সেই আতঙ্কে আছি। সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে তিনি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুস ছোবহান বলেন, চট্টগ্রামে রবি মৌসুমে খিরা, বেগুন, টমেটো ও অন্যান্য সবজির উৎপাদনে বা¤পার ফলন হয়েছে। শীতের সবজি (বেগুন, টমেটোসহ) উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার টন, খিরা ৯৭৮ টন ও মরিচ ৫ হাজার ১৭৪ টন উৎপাদন হয়েছে। ফলে রমজান মাসে সবজির দাম বাড়বে না। এমনকি কাঁচামরিচ, বেগুন, টমেটো ও খিরার দাম বাড়ারও আশঙ্কা নেই।
লেবু হয়ে গেছে মাল্টা-আপেল!
রোজার ইফতারে শরবতের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবু। এবার পবিত্র রমজানে সেই লেবুর জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাজারে এখন ১ হালি (৪টি) ছোট লেবু ৪০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতভেদে দাম ৮০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। আবার বড় লেবুর হালি ১০০ টাকায়ও বিক্রয় করা হচ্ছে।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে লেবুর এই চড়া মূল্য দেখা গেছে। শুধু লেবু নয় ইফতারির সালাদ আইটেমের সব পণ্যের দাম এখন চড়া। বিশেষ করে খিরা, শশা, ধনে পাতা ও পুদিনার দাম বেড়েছে অনেক।
নগরীর বহদ্দারহাটের লেবু ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও একবস্তা লেবুর দাম ছিলো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এখন কিনতে হয় সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। প্রতি বস্তায় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার লেবু থাকে। লেবু বেশি দামে কেনা, তাই বিক্রিও বেশি দামে।’
একই কথা বলেছেন নগরীর ঝাউতলা বাজারের লেবু ব্যবসায়ী শাহ আলমও। তিনি জানান, বড় লেবু প্রতি হালি ৮০ টাকায় কেনা, আমরা বিক্রি করছি ১০০ টাকায়। ছোটগুলো প্রতি হালি ৬০ টাকায় কেনা ৮০ টাকায় বিক্রি। এছাড়া কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৪০ টাকায় কিনে ৬০ টাকায় বিক্রি করছি। ধনেপাতা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় কিনে ১২০ টাকায় বিক্রি, গাজর ৪০ টাকায় কেনা, ৬০ টাকায় বিক্রি এবং খিরা ৫০ টাকা কেনা ৭০ টাকায় বিক্রি করছি।
নগরীর লেবু ও কাঁচা মরিচের পাইকারি বাজার রেয়াজুদ্দিন বাজারের আড়তদার মেসার্স মাগুরা বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী নাজের হোসাইন বলেন, ‘লেবুর এখন সিজন না, তাই দাম বেশি। উৎপাদন খরচও বেশি। চাষিদের কাছ থেকেই বেশি দামে কেনা, বাড়তি দামে বেচা।’
তিনি বলেন, রমজানে লেবু, খিরা, গাজর, শশা ও কাঁচা মরিচের চাহিদা বেশি থাকে। তবে এবার লেবুর সিজন আসেনি এখনো। এমন সময় রোজার মাস পড়েছে। সিজন ছাড়া দাম কমার সম্ভাবনাও কম। তার মতে, বৃষ্টির সিজনে লেবুর দাম কমে যাবে। তখনই মূল সিজন লেবুর। ফলন বেশি হলে দামও কমে যাবে।
আবু হুরাইরা শামীম নামে একজন ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘রমজান মাস এলেই লেবু মাল্টা বা আপেল হয়ে যায়। মাল্টা আর আপেলের দামে বিক্রয় হচ্ছে লেবু। চাঁদ রাতের আগের দিনও লেবুসহ সব সালাদ পণ্যের দাম কম ছিল।
বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও রমজান শুরু হওয়ায় সবজির মতো মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০-৩৩০ টাকায়। দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকায়। খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস (হাঁড়সহ) ৮০০ টাকা, গরুর মাংস (হাঁড় ছাড়া) ৯০০-৯৫০ টাকায়। অথচ ৪-৫ দিন আগে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৯০-১৯৫ টাকায়।
অন্যদিকে কিছুটা দাম বেড়ে বড় সাইজের প্রতিকেজি রুই মাছ (জ্যান্ত) ৪২০-৪৫০ টাকা, ছোট সাইজের প্রতি কেজি রুই মাছ ২২০-২৮০ টাকা, বড় সাইজের প্রতি কেজি কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকা, বড় সাইজের ব্রিগেট কার্প প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্রতিকেজি পোয়া মাছ ৩৫০ টাকা, চিংড়ি (সাইজ ভেদে) প্রতিকেজি ৬০০-৮০০ টাকা, বড় সাইজের সুরমা মাছ প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা, কোরাল প্রতিকেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কালো রূপচাঁদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং ইলিশ (সাইজ ভেদে) প্রতিকেজি ২৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, বাজারে মাছের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রোজা চলে আসায় মাছের চাহিদা বেড়েছে। তাই কয়েকদিনের তুলনায় দাম বাড়তির দিকে।
বেড়েছে ফলের দাম :
রমজানের শুরুতে চট্টগ্রামে বেড়েছে ফলের দামও। এর মধ্যে আমদানি করা আপেল, কমলা, মাল্টা, আনার, নাশপাতি ও আঙুরের দাম বেড়েছে বেশি। বেড়েছে দেশীয় ফলের দামও। এরপরও স্বস্তির মধ্যে রয়েছে বলে জানান নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব ফলের দাম গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই বাজারে আপেলের কেজি ৩২০ টাকা, সবুজ আঙুর ৩৫০ টাকা, মাল্টা ৩০০ টাকা, কালো আঙুর ৪৫০ টাকা, নাশপাতি ৩৫০ টাকা, কমলা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ফল আমদানির ক্ষেত্রে স¤পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ফল ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক কমানো হয়েছে। এরপর ফলের দাম কিছুটা কমে আসে। এখন রমজান উপলক্ষে হয়তো খুচরায় কিছু বাড়তি দামে বিক্রি হতে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, রসালো তরমুজ, আনারস, পেঁপে রয়েছে বাজারে। মানভেদে ২৫০-৩০০ টাকায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ৩০-৫০ টাকায় প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কেজিতে ৭০-৮০ টাকায় পেঁপে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে ৭০-১০০ টাকায় দেশি বড়ই পাওয়া যাচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, বিদেশি ফলের মধ্যে আপেল কমলা আঙুরের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু দেশি ফল বাজারের প্রচুর রয়েছে। সুতরাং বিদেশি ফল দাম বৃদ্ধি করে বিক্রির সুযোগ নেই। কারণ দেশি ফলে চাহিদা পূরণ হবে। এরপর ১০-২০ টাকা বাড়তি বিক্রি হচ্ছে। আবার সেটি কোনো ক্রেতা দরদাম করলে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কাটছে না সয়াবিন তেলের সংকট
বাজারে এখনো কাটেনি সয়াবিন তেলের সংকট। কোনো মুদির দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল সাজানো নেই। শুধু সয়াবিন তেল চাইলেও মিলছে না। যারা নিয়মিত বাজার করেন, কিংবা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি মুদি আইটেম কিনছেন, তাদের বাজারের আকার অনুসারে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন মুদি দোকানিরা। তারপরেও লিটারে ১৫-২৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন কাজির দেউড়ি বাজারের ভান্ডারি স্টোরের মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেল বিক্রি করতে পারছি না। অথচ দেশে প্রচুর সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে সয়াবিন তেল সংকট হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
একই কথা বলেছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স জিরি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, রমজানে ভোজ্যতেলের ৩ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ টন। কিন্তু যারা এই সয়াবিন তেল আমদানি করেন তারা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পদলেহনকারী। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে তারা আগেও সয়াবিন তেল নানা কারসাজি করেছে। এখনো করছে।
চিনি-ছোলা ও পেঁয়াজে স্বস্তি
চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে ইফতারের প্রধান উপাদান ছোলা, চিনি, বেসনের দাম স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রয়েছে। ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১১০ টাকা দরে, খেসারি ১৩০, বেসন ১২০, চিনি ১৩০, মুড়ি-চিড়া প্রতিকেজি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, ভারতীয় ৭০-৮০ টাকা এবং রসুন ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে নগরীর বহদ্দারহাট, ঝাউতলা ও পাহাড়তলি বাজারের ক্রেতারা এই স্বস্তির কথা জানান। ক্রেতারা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমদানি পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এতে ক্রেতারা মোটামুটি স্বস্তিতে রয়েছেন। মনে করা হয়েছিল সরকার পরিবর্তনের পর ছোলা-চিনি ও পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স সালমা ট্রেডার্সের ম্যানেজার জুয়েল মহাজন বলেন, ভারত ছাড়াও বিকল্প ছয়টি দেশ থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দামে স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামও বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা জানান, খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে যেই পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা, সেটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা হলেও খুচরাতে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ভান্ডারি ট্রেডার্সের মালিক নাজমুল হোসাইন বলেন, রমজানে ছোলার চাহিদা এক লাখ টন। এ বছর গেল এক মাসেই পণ্যটির আমদানি হয়েছে ৯৩ হাজার টন। এছাড়াও আগের ছোলাও রয়েছে এবং নতুন আরও পণ্য আসার অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে অনেকটাই দিশেহারা আমদানিকারকরা।
এরই মধ্যে খাতুনগঞ্জে ছোলার দাম কমেছে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা। পণ্য এলে দাম আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা তাদের। এছাড়াও মোটর ডাল আমদানি হয়েছে এক লাখ আট হাজার টন। এক লাখ টন চাহিদার বিপরীতে মসুর ডাল এসেছে ৬২ হাজার টন। সে হিসেবে সব ডাল আমাদের প্রচুর মজুত আছে ও স্টকে আছে।
চিনির বাজারেও সংকট নেই, গত বছরের তুলনায় কমেছে চিনির দাম। রমজানে পণ্যটির তিন লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত এক মাসে আমদানি ১ লাখ ৭৯ হাজার টন। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরে ১ লাখ টন চিনি খালাসের অপেক্ষায়।
বেড়েছে আমদানিকারক
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১৪ জন আমদানিকারক রোজার পণ্য আমদানি করেছেন। সেখানে এবার ৩৬৫ জন রোজার পণ্য এনেছেন। দুবাই, থাইল্যান্ড ও ব্রাজিল থেকে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। আর দেশীয় পণ্য তো আছেই।
এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সংকটের কারণ এবার দেখছি না। তবে এখন থেকেই বিপণন এবং বাজারে মজুত ব্যবস্থা তদারকির দাবি জানিয়েছেন আড়তদার ও পাইকাররা।
মেসার্স আর হেরামাইন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাকের সওদাগর বলেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না ব্যাংক সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু মার্জিন ১০০ ভাগ নিচ্ছে যেটাতে একটু সমস্যা হতো। আগে মার্জিন ৩০ ভাগ দিয়েও খোলা যেত। এতে বড় গ্রুপের সাথে প্রতিযোগিতায় বিপাকে পড়ছেন তারা।
ক্যাবের মন্তব্য
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাবের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, প্রতিবছর রমজান এলেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকেন। অধিক মুনাফার জন্য পণ্য স্টক করা শুরু করেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যেমন সয়াবিন তেল স্টক হয়েছে খুচরা পর্যায়ে। আমাদের সরকার এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। অধিক দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। সরকারের উচিত বাজার তদারকি করা। যথাযথ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।