Jaijaidin

‘অসহায়ের সহায়’ আনছার আলী

Shah Alam Soulav
4 Min Read

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

সংসার আর ব্যবসা লাটে তুলে নিরন্তর মানুষের সেবায় নিয়োজিত এ মানুষটি এখন ছুটে চলেন মানুষের সেবায়। সেবাই তার মন্ত্র, সেবাই তার ধর্ম। আর শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে তার জুড়িমেলা ভার। বিত্ত-বৈভবের মধ্যে বসবাস করেও উপজেলার রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ইছাপুরা এলাকার এ মানুষটি এখন খুজে খুজে অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ান। শুধু তাই নয়। তরুণ এই শিল্পউদ্যোক্তার কারণে শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। সমাজ সেবার অনন্য ভূমিকার কারণে ইতিমধ্যে তিনি ‘গরীবের বন্ধু আনছার ভাই’ হিসেবে রূপগঞ্জে সদর ইউনিয়নে খ্যাতি পেয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রাম। রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে এককালের প্রমত্তা বালু নদের তীর ঘেষা শান্ত-সুনিবিড় ইছাপুরা গ্রামেই জন্ম ‘গরীবের বন্ধু আনসার ভাই’ খ্যাত আনছার আলীর। খুবই সাদামাটা স্বভাবের এ তরুণ শিল্পউদ্যোক্তা অকাতরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সমাজ সেবায়। অঢেল সম্পদ আর বিত্ত-বৈভবের মাঝে বসবাস করা এ মানুষটির মাঝে নেই কোনো হিংসা। নিরংহকারী এ মানুষটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সময় দিতেও খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষগুলোই যেনো তার অতি আপনজন। মানুষের ভালোবাসার মাঝেই তিনি খুজে পান আনন্দ আর সুখ। সংসার আর নানা ব্যবসা লাটে তুলে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন মানুষের সেবায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর রমজান মাসের প্রথম দিকে ইউনিয়নজুড়ে গরীব-অসহায় মানুষের মাঝে খেজুর পৌছিয়ে দেন। পাশাপাশি ছোলা, ডাল, তেল ও ভেষণসহ রমজানের আনুসাঙ্গিক দ্রব্যাদি তার নিজ উদ্যোগে দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতরের দিন কয়েক আগে দেওয়া হয় সেমাই-চিনি, চাল-ডাল-তেল, মুরগী, পেয়াজ, আলু। পাশাপাশি শাড়ী-লুঙ্গিতো থাকেই।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, গরীব ঘরের কোনো মেয়ের টাকার অভাবে বিয়ে দিতে সমস্যা হলে তরুণ এ উদ্যোক্তার উদ্যোগে ঐ মেয়ের বিয়ের সমস্ত খরচ বহন করা হয়। অসহায় কিংবা দিনমজুর ঘরের কোনো ছেলে-মেয়ের টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ‘গরীবের বন্ধু’ খ্যাত আনছার আলী পাশে দাড়ান। নিজের কাধে দায়িত্ব তুলে নেন ঐ ছাত্র অথবা ছাত্রীর লেখাপড়ার সম্পূর্ন খরচ। এসবের পাশাপাশি তিনি এলাকায় এলাকায়, গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ, শীতে কম্বল বিতরণ, মসজিদ-মাদ্রাসায় কোরআন শরীফ বিতরণসহ নানা সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে তার জুড়িমেলা ভার। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যা হলে পাশে দাড়ান। এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, কৃষ্টি-কালচারের প্রতিও তার রয়েছে নজর।

কথা হয় পর্শি গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়েও তিনি যেভাবে গরীব মানুষের সঙ্গে মিশেন এটা খুব কমই পাওয়া যায়। জাঙ্গীর এলাকার ফাতেমা বেগম বলেন, ওনার মতন মানুষ অয় না। বিপদে-আপদে ডাক দিলেই ওনি আমাগো সামনে ( পাশে ) খাড়ান ( দাড়ান )। মুশরী এলাকার বিপ্লব মিয়া। মৃত্যুর কিনারায় দাড়িয়ে আছেন। এখনো মাথায় বোঝা তুলে জীবন চালান। তিনি বলেন, স্যারে মানুষ ভালা। শীত আইলে কম্বল দেয়। রোজা আইলে খাবার পাডায় ( পাঠায় )। ঈদে নানান কিছু দেয়।

খোজ নিয়ে জানা যায়, গত প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা নীরবে ‘গরীবের বন্ধু’ খ্যাত এ মানুষটি রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মানুষের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। সপ্তাহের প্রায় তিন থেকে চারদিন তিনি মানুষের পাশে থাকেন। শুক্র ও শনিবার সারাক্ষণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনেন। এ দু’দিন ভিখারি থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর হাজারো মানুষ ভীড় করে ইছাপুরা এলাকায়। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে অসহায়কে বুকে জড়িয়ে ধরেন। মুরুব্বীদের সঙ্গে খোশগল্প করেন। তরুণদের সঙ্গে মজা করেন। আর নারীদের সম্মান করে কথা বলেন। নীরবে-নিভৃতে পথচলা এ মানুষটি আড়ালে থাকতে খুব পছন্দ করেন। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের আনাচে-কানাচের আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা সবাই স্বপ্ন দেখেন তাকে নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন আগামীর রূপগঞ্জ ইউনিয়ন বিনির্মাণে। কথা হয় ‘গরীবের বন্ধু’ খ্যাত আনছার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছে। আমি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। অসহায়-গরীব মানুষের পাশে দাড়াতে চাই। চাই সমাজের সামাজিক কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখতে। একটা কথা বুঝি, মানুষের ভালোবাসার উপড়ে কিছু নাই।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *