Jaijaidin

অপরাধ করাই যেন তাদের নেশা!

Shah Alam Soulav
4 Min Read

যাযাদিপ্র রিপোর্ট

অপরাধ করাই যেন তাদের নেশা। অপহরণ আর অপহরণের পর হত্যা করা যেন তাদের কাছে ডাল ভাত। এসব অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নরসিংদী জেলে কারাগারে বন্দি ছিল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নরসিংদী জেলখানা থেকে পালিয়ে যায়। গড়ে তুলে ছিনতাই চক্র।

চক্রের কাজই ছিল সড়ক-মহাসড়কে মালামাল বোঝাই যানবাহন ছিনতাই। চালকে হত্যা করে অটোরিকশা ও সিএনজি ছিনতাই ও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। মুক্তিপণ না পেলেই অপহৃতকে হত্যা। অবশেষে নৌ পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে জেল পলাতক দুই জনসহ আলোচিত সেই চক্রের সাত সদস্য।

নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইলো ঘাট সংলগ্ন বিশ্ব খাদ্য গুদামের পূর্ব পার্শ্বে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক পুরুষের (৫১) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিহতের পরিচয় শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা দায়ের হয়। হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সুনির্দিষ্ট তথ্যের সূত্রধরে নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল জেলাটির বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে।

নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জের অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) নেতৃত্বে কাঁচপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল মাবুদের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইকারী চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা হচ্ছেন, লিয়ন (৩২), বোরহান ওরফে ইমরান ওরফে সোহেল ওরয়ে পিচ্ছি (২১), শাওন বেপারী (২২), মোছা. পারভীন বেগম (২২), শাহীন মোল্লা (৩০), মোহাম্মদ আলী (৫৫) ও আল আমিন সর্দারকে (৩৮) গ্রেপ্তার করে।

নৌ পুলিশ নারায়ণগঞ্জের অঞ্চলের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বরত অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলমগীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তাররা পেশাদার অপরাধী চক্র। চক্রের অন্যতম প্রধান দুই হোতা হচ্ছে লিয়ন ও বোরবাহন ওরফে ইমরান ওরফে সোহেল ও ওরফে পিচ্চি। তারা অপহরণ ও হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তারা নরসিংদী জেলা কারাগারে বন্দি ছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নরসিংদী কারাগারে বিশৃঙ্খলার সুযোগে তারা কারাগারে থেকে পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে থেকে তারা আবারও অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মূলত এ দু’জন পেশাদার অপরাধী। অপরাধ করাই যেন তাদের নেশা। অপরাধ না করে তারা থাকতে পারে না। তারা জেলখানা পালিয়ে আত্মগোপনে থেকেই ছিনতাইকারী চক্র গড়ে তুলে। চক্রের হোতা জেল পলাতক দু’জন। তারা সুযোগ পেলে সড়ক মহাসড়কে মালামাল বোঝাই যানবাহন ছিনতাই করত। তবে তাদের প্রধান টার্গেট ছিল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই। যাত্রীবেশে ভাড়া নিয়ে নির্জন জায়গায় নিয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিত। বাঁধা দিলেই তারা চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিত। আর চালকের লাশ ফেলে দিত পার্শ্ববর্তী কোন নালা, পুকুর, ডোবা বা নদীতে। ভাসমান অবস্থায় যে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে, তিনিও একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে তার অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি আলমগীর হোসেন আরও জানান, গ্রেপ্তারদের কাছে পাওয়া গেছে ছিনতাই করা একটি অটোরিকশা। যেটি নদী থেকে যে ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে তার। নিহত অটোচালকের ব্যবহৃত একটি আইটেল মোবাইল ফোন। চালককে অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত চেতনা নাশক ওষুধ। ছিনিয়ে নেওয়া অটোরিকশা বিক্রির ২৫ হাজার টাকা। চক্রটি নারায়ণণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে পরিকল্পিতভাবে অটোরিকশা ছিনতাই করত। ছিনতাইয়ের জন্য অনেক সময় তারা চালকের সঙ্গে খাতির করে তাদের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দিত। এরপর চালককে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে যেত। বাঁধা দিলেই চালকদের হত্যা করে লাশ ফেলে দিত পার্শ্ববর্তী ডোবা, পুকুর, নালা, খাল-বিল বা নদীতে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *